চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র, পাল্টা পদক্ষেপ চীনের।
চীন এবং আমেরিকার মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন করে আরও একটি মোড় নিয়েছে। বেইজিং মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, তার দেশ “ভয় পায় না”।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর আগে চীনের পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধি করে। এরপরই চীন এই পদক্ষেপ নিল। তবে, চীন ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা ১২৫ শতাংশের বেশি শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে না। তাদের মতে, এর চেয়ে বেশি শুল্ক আরোপের কোনও মানে হয় না।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনের উপর অতিরিক্ত উচ্চ শুল্ক আরোপ করা একটি সংখ্যাতাত্ত্বিক খেলায় পরিণত হয়েছে, যার কোনো বাস্তব অর্থনৈতিক তাৎপর্য নেই।” তিনি আরও বলেন, “এটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যকে একটি ব্ল্যাকমেইলিং এবং জবরদস্তিমূলক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতাকে প্রকাশ করে এবং নিজেদের হাসির পাত্রে পরিণত করছে।”
বিশ্বের বৃহত্তম দুটি অর্থনীতির মধ্যে এই বাণিজ্য যুদ্ধ আন্তর্জাতিক বাজারকে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে। চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভির মাধ্যমে জানা যায়, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে বেইজিংয়ে এক বৈঠকে বলেছেন, “বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ জেতে না এবং বিশ্বের বিরুদ্ধে যাওয়া কেবল আত্ম-বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যাবে।” তিনি আরও বলেন, “চীনের উন্নয়ন গত ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে আত্মনির্ভরতা ও কঠোর পরিশ্রমের ওপর ভিত্তি করে হয়েছে—অন্যদের কাছ থেকে পাওয়া সাহায্যের ওপর নয়। তাই, কোনো অন্যায় নিপীড়নে চীন ভয় পায় না।”
মার্কিন শুল্কের প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীন হলিউডের চলচ্চিত্র আমদানি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইসঙ্গে কিছু মার্কিন কোম্পানিকে চীনে ব্যবসা করা বা দ্বৈত-ব্যবহারের পণ্য আমদানি করতেও সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এই নজিরবিহীন শুল্ক হার বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরও খারাপ করার হুমকি দিচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সঙ্গে আলোচনার জন্য শি জিনপিংয়ের আগ্রহের অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে বেইজিং এখন পর্যন্ত শীর্ষ পর্যায়ে কোনও আলোচনার প্রস্তাব দেয়নি। বরং শুল্ক নিয়ে আলোচনার পরিবর্তে, শি জিনপিং অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছেন। স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি তিনি আগামী সপ্তাহে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং কম্বোডিয়া সফর করবেন।
এই সফরগুলো এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন দুই পরাশক্তির মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে চীনের বার্তা হলো, তারা পিছিয়ে আসবে না। শি জিনপিং ট্রাম্পের শুল্কের কারণে সৃষ্ট অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে চাইছেন। তিনি চীনকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার এবং বিশ্ব বাণিজ্যের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন।
চীনের এই পদক্ষেপের কারণ হলো, তারা বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলা করতে চাইছে এবং একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হলো, বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে দেশের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বিশেষ করে, তৈরি পোশাক (RMG) শিল্পের ওপর এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। বাংলাদেশের উচিত হবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং নতুন বাজার অনুসন্ধানের চেষ্টা করা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন