মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, পরিষেবা খাত, বর্তমানে এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে এই খাতের বাণিজ্য উদ্বৃত্তের (trade surplus) উপর নেমে এসেছে অশনি সংকেত। আর এর প্রভাব শুধু আমেরিকাতেই সীমাবদ্ধ নয়, এর থেকে বাংলাদেশেরও অনেক কিছু শেখার আছে।
আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয়, যেখানে দেশটি বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে বেশি, রপ্তানি করে কম। কিন্তু পরিষেবা খাতে চিত্রটা ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি পরিষেবা বিক্রি করে। এর ফলে চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা এবং মেক্সিকোর মতো প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গেও তাদের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পরিষেবা খাতে আমেরিকার উদ্বৃত্ত গত বছর ২৯৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা তার আগের বছরের চেয়ে ৫ শতাংশ এবং তার আগের বছরের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। এই পরিষেবা খাত আমেরিকার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই খাত দুর্বল হলে তা পুরো অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধ যদি অব্যাহত থাকে, তবে এর ফলস্বরূপ শুধু আমেরিকার পরিষেবা খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, বরং এর প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে। চীন, যারা মার্কিন চলচ্চিত্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার, তারাও তাদের দেশে মার্কিন চলচ্চিত্র রপ্তানির উপর বিধিনিষেধ আরোপের কথা বিবেচনা করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও (European Union) তাদের দেশে মার্কিন ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম সীমিত করতে পারে। এমনকি, তারা মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর উপর বিশাল অঙ্কের জরিমানাও করতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, আমেরিকায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কারণ, ভিসা নীতি কঠোর হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী এখন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চাইছে না। শুধু তাই নয়, পর্যটকদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে, যা হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোর জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
ডেল্টা এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, তারা চলতি বছরের দ্বিতীয় ভাগে মার্কিন নাগরিকদের ভ্রমণ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে। এর ফলে তারা তাদের কর্মীদের সংখ্যাও কমানোর পরিকল্পনা করছে। লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, তাদের ৪০ শতাংশ পণ্য চীন থেকে আসে বা চীনে যায়। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে এই বছর সেখানে পণ্য পরিবহনে ১০ শতাংশ পর্যন্ত পতন হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আমেরিকার অর্থনীতিতে মন্দা (recession) দেখা দিতে পারে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে পরিষেবা খাতে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং আর্থিক পরিষেবা সহ বিভিন্ন শিল্প এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি। আমাদের তৈরি পোশাক (RMG) খাত, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, বিশ্ব বাজারের অস্থিরতা থেকে কীভাবে নিজেদের রক্ষা করতে পারে, তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। বাণিজ্য চুক্তি এবং বাজারের বৈচিত্র্য আনা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এছাড়াও, পরিষেবা খাতের উন্নতি এবং বিকাশে মনোযোগ দেওয়া দরকার, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি স্থিতিশীল অর্থনীতি তৈরিতে সাহায্য করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন