ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মিয়ানমারে ত্রাণ বিতরণে বাধা সৃষ্টি এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য দেশটির সামরিক জান্তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানান, ভূমিকম্পের পর যখন সবার ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে মনোযোগ দেওয়া উচিত, তখন সামরিক বাহিনী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলা চালাচ্ছে।
গত ২৮শে মার্চ মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, এতে তিন হাজার ছয়শ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই দুর্যোগের পর যুদ্ধরত দলগুলোর মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কথা ছিল, যা ২২শে এপ্রিল পর্যন্ত বহাল থাকার কথা ছিল।
কিন্তু জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, সামরিক বাহিনী সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে এখনও পর্যন্ত ১২০ বারের বেশি হামলা চালিয়েছে। সংস্থাটির প্রধান ভলকার তুর্ক সামরিক বাহিনীকে মানবিক সহায়তা বিতরণে সব ধরনের বাধা দূর করতে এবং অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মিয়ানমারে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী।
এরপর থেকে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ চলছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বলছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল সাগাইং অঞ্চলে, বিশেষ করে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে, স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে চীন মিয়ানমারের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা হিসেবে এক বিলিয়ন ইউয়ান (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা) দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। চীন সরকার খাদ্য, ঔষধ এবং জরুরি বাসস্থান তৈরিতে এই অর্থ ব্যয় করবে।
উল্লেখ্য, ভূমিকম্পের পর চীন উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে এবং চীনের রেড ক্রসের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তাও দিয়েছে।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে ফেব্রুয়ারি ২০২১ সাল থেকে আটককৃত সকল বন্দীকে, যাদের মধ্যে অং সান সু চি এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউ উইন মিন্টও রয়েছেন, তাদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেছেন, সামরিক বাহিনীর এমন কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা