যুক্তরাষ্ট্র থেকে মধ্য আমেরিকায় বিতাড়িত হওয়া এক ব্যক্তির ঘটনা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিতাড়িত হওয়া কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়া নামের ওই ব্যক্তিকে এমএস-১৩ নামের একটি কুখ্যাত গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।
তবে গার্সিয়ার পরিবার ও আইনজীবীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। খবরটি জানিয়েছে সিএনএন।
মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে বিতর্কিতভাবে বিতাড়িত করার প্রেক্ষাপটে তার বিরুদ্ধে ওঠা গ্যাং সদস্যের অভিযোগ জোরালো করতে চাইছে দেশটির প্রশাসন। একইসঙ্গে, তার প্রতি যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এমনকি, তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার জন্য আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নেও সরকারের পক্ষ থেকে অনীহা দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি সাংবিধানিক সংকট তৈরি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে মেরিল্যান্ড থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেট সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন এল সালভাদরে যান এবং সেখানে অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সিনেটর গার্সিয়াকে “অবৈধভাবে অপহরণ করা হয়েছে” বলেও মন্তব্য করেছেন।
এর পরেই ট্রাম্প প্রশাসন সিনেটরের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট গার্সিয়াকে গ্যাং সদস্য এবং “নারী নির্যাতনকারী” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বিষয়টিকে কেন্দ্র করে প্রশাসন কিছু নথি প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, ২০১৯ সালের একটি ঘটনার বিবরণ যেখানে গার্সিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যদিও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
এছাড়া, ২০২১ সালে তার স্ত্রীর করা একটি সুরক্ষা আদেশের নথিও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে, পরবর্তীতে ওই দম্পতি তাদের মধ্যকার সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ায় সুরক্ষা আদেশের প্রক্রিয়াটি আর বেশি দূর আগায়নি।
২০১৯ সালের একটি ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, গার্সিয়া ও আরও তিনজন লোক মেরিল্যান্ডের একটি হোম ডিপোর পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখানে এক পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে তাদের মধ্যে দু’জন তাদের কোমর থেকে কিছু “অজ্ঞাত বস্তু” ফেলে দেন।
পুলিশ ঘটনাস্থলের কাছেই “মারিজুয়ানা” ভর্তি দুটি ছোট প্লাস্টিকের বোতল খুঁজে পায়। পরে তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ওই নথিতে বলা হয়েছে, উপস্থিত অন্য তিনজনের মধ্যে একজনকে এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তার বিরুদ্ধে গ্যাং সংশ্লিষ্ট অপরাধের অভিযোগ ছিল। এছাড়া, আরেকজনের চোখের চারপাশে, কানে ও মুখে খুলির উল্কি ছিল, যা “হিস্পানিক গ্যাং সংস্কৃতির” পরিচায়ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গার্সিয়ার পরনে শিকাগো বুলসের টুপি ও হুডি ছিল। এছাড়া, তার কাছে কিছু নগদ টাকাও পাওয়া যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, এগুলোও গ্যাং সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত। এক সূত্রের খবর অনুযায়ী, গার্সিয়া এমএস-১৩ গ্যাংয়ের “ওয়েস্টার্নস ক্লিকের” সক্রিয় সদস্য।
আরেকটি নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গার্সিয়ার কোনো “অপরাধমূলক ইতিহাস” নেই। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছে প্রায় ১,১৭৮ ডলার পাওয়া গিয়েছিল।
তবে চতুর্থ ব্যক্তির গ্যাংয়ের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা, তা নিশ্চিত করা যায়নি। গার্সিয়াকে পরে মুক্তি দেওয়া হয়।
নথিতে আরও বলা হয়েছে, গার্সিয়া ও অন্য এক ব্যক্তিকে একটি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। তবে, সেই তদন্ত সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
গার্সিয়ার বিরুদ্ধে কোনো হত্যার অভিযোগও আনা হয়নি।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে গার্সিয়ার স্ত্রী জেনিফার ভাসকুয়েজ সুরা জানান, তিনি তার স্বামীকে জামিনে মুক্ত করার জন্য একজন আইনজীবী নিয়োগ করেছিলেন। তিনি আরও জানান, আদালতে শুনানির সময় তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন, যখন সরকার জানায় যে কিলমার এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য হওয়ায় তাকে আটক রাখা উচিত।
সাধারণত, অভিবাসন বিষয়ক আদালতগুলো ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেওয়া প্রমাণকে গুরুত্ব দেয়। এক্ষেত্রে, অভিযুক্তকে প্রমাণ করতে হয় যে তিনি গ্যাং সদস্য নন।
গার্সিয়ার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।
লিবার্টারিয়ান-পন্থী ক্যাটো ইনস্টিটিউটের অভিবাসন বিষয়ক পরিচালক ডেভিড বিয়ার বলেন, “এই পরিস্থিতিতে মুক্তির প্রমাণ আবেদনকারীর ওপর বর্তায়। মুক্তির বিরুদ্ধে একটি পক্ষপাতিত্ব কাজ করে। কোনো দুর্বল তথ্যও মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
২০২১ সালে গার্সিয়ার স্ত্রীর দায়ের করা সুরক্ষা আদেশের একটি কপিও প্রকাশ করেছে ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস)। যদিও পরে সুরা জানান, তারা তাদের সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলেছেন এবং তিনি মনে করেন না যে এই আদেশের কারণে গার্সিয়াকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো উচিত।
২০২২ সালের শেষের দিকে, টেনেসিতে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর দায়ে গার্সিয়াকে থামানো হয়। সে সময় গাড়িতে আরও কয়েকজন ছিল। টেনেসির হাইওয়ে পেট্রোলের একজন মুখপাত্র সিএনএনকে জানান, গার্সিয়ার বিষয়ে ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানো হয়েছিল।
ডিএইচএস-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, গার্সিয়াকে এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তবে, গার্সিয়ার স্ত্রী ভাসকুয়েজ সুরা জানান, তার স্বামী নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন এবং মাঝে মাঝে শ্রমিকদের বিভিন্ন স্থানে আনা-নেওয়া করতেন। তাই, অন্যদের সঙ্গে গাড়িতে থাকাকালে তাকে থামানোটা অস্বাভাবিক নয়।
তিনি আরও বলেন, “তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। দুর্ভাগ্যবশত, কিলমার বর্তমানে বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় কারাগারে বন্দী রয়েছেন, যার ফলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাব দিতে বা নিজেকে রক্ষা করতে পারছেন না।
তথ্য সূত্র: সিএনএন