যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি: ট্রাম্পের চ্যালেঞ্জ, বিশ্ব বাজারের অস্থিরতা ও বাংলাদেশের জন্য শঙ্কা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা। দ্রুত সময়ের মধ্যে একাধিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার যে ঘোষণা তিনি দিয়েছেন, তাতে সন্দিহান বিশ্ব অর্থনীতি। বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব বাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসন উচ্চ শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে আলোচনার টেবিলে আনতে চাইছে। যদিও চীনকে এর বাইরে রাখা হয়েছে। কিন্তু বাজারে এর বিপরীত প্রভাব দেখা যাচ্ছে। শেয়ার বাজারে অস্থিরতা বেড়েছে, বন্ডের দাম কমছে, তেলের দাম নিম্নমুখী এবং ডলারের দর পতন হয়েছে।
শেয়ার বাজারের চিত্র:
গত কয়েকদিনে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে দর পতন দেখা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই পরিস্থিতিতে, বিনিয়োগকারীরা বেশ সতর্ক হয়ে ট্রেড করছেন।
বন্ড বাজারের পরিস্থিতি:
সাধারণত, অস্থির সময়ে বন্ডের দাম বাড়ে। কিন্তু এখানে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। বন্ডের দাম কমছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মার্কিন বাণিজ্য নীতি নিয়ে আস্থার অভাব নির্দেশ করে। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি তার প্রধান অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে পারে।
তেলের বাজারে মন্দা:
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে তেলের চাহিদাও কমতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে তেলের দাম কমেছে। বর্তমানে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম প্রায় ৬০ ডলারে নেমে এসেছে, যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
ডলারের দর পতন:
শুল্ক আরোপের ফলে সাধারণত স্থানীয় মুদ্রার মান বাড়ে, কারণ এতে মানুষ বিদেশি পণ্যের পরিবর্তে দেশীয় পণ্য কিনতে উৎসাহিত হয়। কিন্তু ডলারের ক্ষেত্রে তেমনটা হচ্ছে না। ডলারের দর কমে গেছে, যা বাণিজ্য যুদ্ধের ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বল হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
বাণিজ্য চুক্তির জটিলতা:
ট্রাম্প প্রশাসন যদিও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করতে চাইছে, তবে এটি সময়সাপেক্ষ এবং জটিল প্রক্রিয়া। এরই মধ্যে ৭০টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ এখনো একটি বড় সমস্যা।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ:
যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর প্রায় ১৪৫% শুল্ক আরোপ করেছে এবং চীনও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ১২৫% শুল্ক আরোপ করেছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের বৃহত্তম এই দুই অর্থনীতির মধ্যেকার সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা:
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বাণিজ্য চুক্তিগুলো অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হতে পারে, তবে এরই মধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য প্রভাব:
যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে। বিশ্ববাজারে চাহিদা কমলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা প্রবাসী আয় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন