মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে বিভেদ দেখা দিয়েছে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁরা সরব হলেও, এই বিষয়ে তাঁদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।
তাঁদের মূল আপত্তি ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপের ‘বিশৃঙ্খলার’ বিরুদ্ধে।
মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press) সূত্রে জানা যায়, ডেমোক্র্যাটরা সাধারণত শুল্কের বিরোধিতা করেন না। তাঁদের বক্তব্য হল, নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে শুল্ক আরোপ করা হলে তা কার্যকরী হতে পারে।
তবে ট্রাম্প যে পদ্ধতিতে শুল্ক আরোপ করছেন, তার ফলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে।
মার্কিন সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, “শুল্ক আমাদের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার। কিন্তু ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপের কারণে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, তা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে আমাদের অর্থনীতি এবং পরিবারগুলোর ক্ষতি করছে।
তিনি বিশ্বজুড়ে একটা ঘূর্ণিঝড় তৈরি করেছেন, যা কারো জন্যই ভালো নয়।”
অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইন মনে করেন, “লক্ষ্যযুক্ত শুল্ক কার্যকর হতে পারে, তবে ঢালাওভাবে শুল্ক আরোপ করা হলে তা খারাপ ফল দেয়।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের মধ্যে এই বিষয়ে একটা ঐকমত্য রয়েছে যে, শুল্কের সঠিক প্রয়োগ জরুরি।”
ডেমোক্র্যাটদের এই বার্তা দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হল, তাঁরা একটি স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থা চান এবং বাজারের অস্থিরতা কমাতে আগ্রহী। তাঁদের এই অবস্থান এমন কিছু ভোটারের মন জয় করতে পারে, যাঁরা আরও বেশি উৎপাদন দেখতে চান, কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ফল নিয়ে সন্দিহান।
তবে সমালোচকদের মতে, দ্রুতগতির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ধরনের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ খুব একটা প্রভাব ফেলে না।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে ডেমোক্র্যাটদের এই অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সালে ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়বে এবং কর্মসংস্থান কমবে।
ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, ডেমোক্র্যাটদের এই ধরনের মন্তব্য তাঁদের দ্বিচারিতার প্রমাণ।
লেভিট সাংবাদিকদের বলেন, “ওয়াশিংটনের সবাই, তা তাঁরা স্বীকার করুন বা না করুন, জানেন যে শুল্ক এবং বাণিজ্যনীতির ক্ষেত্রে এই প্রেসিডেন্ট সঠিক।”
তবে, সব ডেমোক্র্যাট এই বিষয়ে একই সুরে কথা বলছেন না। মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার বুধবার ওয়াশিংটনে দেওয়া এক ভাষণে শুল্ককে ‘সার্জিক্যাল অস্ত্রের’ মতো ব্যবহারের কথা বলেন।
এর কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন এবং একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পরবর্তীতে হুইটমারের দপ্তর জানায়, ওই অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোয় তিনি ‘বিস্মিত’ হয়েছিলেন।
ট্রাম্প সম্প্রতি চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মেক্সিকো, কানাডা, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ওপর একতরফাভাবে শুল্ক আরোপ করেছেন। যদিও পরে তিনি ৯০ দিনের জন্য এই শুল্ক স্থগিত করেন।
তবে, অনেক পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক বহাল রেখেছেন। চীনের পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ এবং মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।
এর ফলে মার্কিন পরিবারগুলোর খরচ বছরে ৪,০০০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুল্কের কারণে মার্কিন অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। শেয়ার বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
কিছু ডেমোক্র্যাট তাঁদের এলাকার মানুষের কথা ভেবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার চেষ্টা করছেন। উইসকনসিনের সিনেটর ট্যামি Baldwin বলেন, “বিশেষ করে কৃষকরা, যারা ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, তাঁরা এখন তাঁদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।”
অন্যদিকে, উইসকনসিনের প্রতিনিধি গেন মুর মনে করেন, শুল্ক তাঁর রাজ্যের শহর ও গ্রামীণ জনপদের জন্য ‘বিপর্যয়কর’ হবে। তবে তিনি আরও যোগ করেন, শ্রমিক ও পণ্যের মান উন্নত করতে ডেমোক্র্যাটদের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত, যাতে বিশ্ব বাজারে মার্কিন পণ্য ও পরিষেবা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে।
তবে, হাওয়াইয়ের সিনেটর ব্রায়ান শ্যাৎজ মনে করেন, ট্রাম্প ইচ্ছাকৃতভাবে মার্কিন অর্থনীতিকে ধ্বংস করছেন।
তাঁর মতে, এই বিষয়ে ডেমোক্র্যাটদের সুস্পষ্টভাবে তাঁদের বক্তব্য জানানো উচিত।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
তবে, বিশ্ব বাণিজ্য এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিবর্তন আসায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্পসহ রপ্তানিমুখী বিভিন্ন খাতে এর প্রভাব পড়তে পারে।
এছাড়াও, রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রেও কোনো পরিবর্তন আসে কিনা, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস