ওকলাহোমা সিটি বোমা হামলা: আমেরিকার ইতিহাসে নৃশংসতম আভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী হামলা।
আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে, ১৯৯৫ সালের ১৯শে এপ্রিল, ওকলাহোমা শহরের আলফ্রেড পি. মুরার ফেডারেল বিল্ডিংয়ে সংঘটিত হয় এক ভয়াবহ বোমা হামলা। এই হামলায় নিহত হয়েছিলেন ১৬৮ জন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসের সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
সকাল ৯টা ২ মিনিটে, একটি ভাড়া করা ট্রাক, যা বিস্ফোরক দিয়ে বোঝাই ছিল, সেটি ফেডারেল বিল্ডিংয়ের সামনে বিস্ফোরিত হয়। এই বিস্ফোরণের ফলে নয় তলা বিশিষ্ট ভবনটির উত্তর দিকের অংশ সম্পূর্ণরূপে ধসে পড়ে।
ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন অসংখ্য মানুষ। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ১৯ জন শিশুও, যাদের অনেকে বিল্ডিংয়ের ভেতরের একটি ডে-কেয়ার সেন্টারে ছিল। এই ঘটনার অভিঘাত ছিল সুদূরপ্রসারী, যা কেবল ওকলাহোমা শহর নয়, পুরো আমেরিকা জুড়েই শোকের ছায়া নামিয়ে এনেছিল।
এই নৃশংস হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন দুই জন: প্রাক্তন সেনা সদস্য টিমোথি ম্যাকভেই এবং তার সহযোগী টেরি নিকোলস। তারা দুজনেই চরমপন্থী আমেরিকান সরকার বিরোধী মনোভাব পোষণ করতেন।
তাদের এই ঘৃণ্য কাজের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল ওয়েকো অবরোধের ঘটনা, যেখানে ফেডারেল এজেন্টদের সঙ্গে ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্যদের সংঘর্ষ হয়েছিল। ম্যাকভেই মনে করতেন, সরকার তার নাগরিকদের অধিকার হরণ করছে।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, ম্যাকভেইকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে একটি ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অভিযোগে আটক করা হলেও, পরে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
তদন্তকারীরা দ্রুতই টেরিকে চিহ্নিত করেন এবং তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
বিচারের দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে, টিমোথি ম্যাকভেইকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ২০০১ সালের ১১ই জুন, তাকে ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
অন্যদিকে, টেরি নিকোলসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি কলোরাডোর একটি উচ্চ নিরাপত্তা কারাগারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন।
বোমা হামলার পর, উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালান। এই ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ।
বোমা হামলার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে এখনো সেই বিভীষিকাময় স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ শারীরিক ও মানসিক আঘাত কাটিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেছেন।
এই ঘটনার স্মৃতি আজও আমেরিকার মানুষের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। সম্প্রতি, এই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত ‘ওকলাহোমা সিটি বোম্বিং: আমেরিকান টেরর’ নামে একটি তথ্যচিত্র মুক্তি পেয়েছে, যেখানে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে।
এই তথ্যচিত্রটি ঘটনার ভয়াবহতা এবং এর পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে নতুন করে জানতে সাহায্য করে।
তথ্য সূত্র: পিপল