যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করা কতটা কঠিন?
সম্প্রতি, একজন ব্রিটিশ লেখক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নীতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে, দেশটি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই বিষয়ে তিনি একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করেন, যেখানে আমেরিকান পণ্য ও পরিষেবা বর্জন করার অঙ্গীকার ছিল।
লেখটি মূলত একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বিবরণ, যেখানে লেখক কীভাবে এই কঠিন কাজটি করার চেষ্টা করেছেন, তা তুলে ধরা হয়েছে।
লেখকের মতে, এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ ছিল রাজনৈতিক। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নীতি, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে গৃহীত কিছু পদক্ষেপ, সমর্থনযোগ্য নয়। তাই, তিনি ব্যক্তিগত পর্যায়ে এর প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছিলেন।
এই উদ্দেশ্যে, তিনি প্রথমে নিজের জীবন থেকে আমেরিকান প্রভাব দূর করতে একটি নিয়ম তৈরি করেন।
নিয়মগুলো ছিল বেশ কঠিন। লেখক কোনো আমেরিকান পণ্য কিনবেন না বা কোনো আমেরিকান পরিষেবা ব্যবহার করবেন না—এমনটাই ছিল প্রথম নিয়ম। এমনকি, আগে কেনা কোনো পণ্য নষ্ট হয়ে গেলে, সেটির বদলে আর কোনো আমেরিকান পণ্য ব্যবহার করা যাবে না।
দ্বিতীয়ত, কোনো আমেরিকান শিল্পী—যেমন লেখক, সঙ্গীতশিল্পী বা চলচ্চিত্র নির্মাতার কাজও তিনি গ্রহণ করবেন না।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে, লেখকের যাত্রা ছিল সবচেয়ে কঠিন। তিনি তাঁর গুগল পিক্সেলবুক গো-র বদলে জার্মানির তৈরি একটি ল্যাপটপ ব্যবহার করা শুরু করেন, যেখানে ফিনল্যান্ডের তৈরি একটি অপারেটিং সিস্টেম ছিল।
এছাড়া, গুগল পিক্সেল ৮এ স্মার্টফোনের পরিবর্তে তিনি ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসের তৈরি একটি ফোন বেছে নেন। তবে, এখানেও জটিলতা ছিল। কারণ, এই ফোন এবং ল্যাপটপের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি হয় এশিয়াতে, যা যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানির মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।
প্রযুক্তি বর্জনের পাশাপাশি, লেখক সামাজিক মাধ্যম থেকেও দূরে থাকার চেষ্টা করেন। তিনি তাঁর ব্লুস্কাই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন এবং একটি বিকল্প প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে শুরু করেন।
ইউটিউবের বিকল্প হিসেবে তিনি ফরাসি একটি ওয়েবসাইটে ভিডিও দেখা শুরু করেন, যদিও তাঁর মতে, এটি ছিল খুবই সীমিত। নেটফ্লিক্স, অ্যাপল টিভি+, ডিজনি+ এবং প্রাইম ভিডিওর মতো পরিষেবাগুলোও তিনি ত্যাগ করেন।
খাবার এবং পোশাকের ক্ষেত্রেও লেখক বেশ কিছু পরিবর্তন আনেন। তিনি জানতে পারেন, অনেক জনপ্রিয় খাদ্যপণ্যের প্রস্তুতকারক কোম্পানি আসলে যুক্তরাষ্ট্রের। তাই, তালিকা ধরে ধরে তিনি সেই সব পণ্য বর্জন করতে শুরু করেন।
পোশাকের ক্ষেত্রে, তিনি কনভার্স অল স্টার্সের পরিবর্তে জার্মানির তৈরি জুতা এবং জাপানি পোশাক বেছে নেন।
তবে, এই সবকিছু করতে গিয়ে লেখক বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হন। তাঁর মতে, আধুনিক জীবন থেকে সম্পূর্ণরূপে আমেরিকান প্রভাব দূর করা প্রায় অসম্ভব। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে, যেমন—ব্যাংকিং পরিষেবা, পেনশন স্কিম এবং এমনকি পছন্দের ফুটবল ক্লাব—এসবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক রয়েছে।
সবশেষে, লেখক স্বীকার করেন, এই ধরনের চেষ্টা কঠিন এবং এতে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। তাঁর মতে, একটি আদর্শ জীবন হয়তো পাওয়া যেতে পারে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব প্রায় নেই, কিন্তু সেই পথে চলতে গেলে অনেক কিছুই হারাতে হতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান