একটি দুর্ঘটনার পর হুইলচেয়ার টেনিসে সাফল্যের শিখরে ওঠা লুসি শুকের।
খেলাধুলা মানুষের জীবনকে নতুন দিশা দিতে পারে, ফিরিয়ে আনতে পারে হারানো আত্মবিশ্বাস। তেমনই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলেন ব্রিটিশ হুইলচেয়ার টেনিস খেলোয়াড় লুসি শুকের। জীবনের কঠিন এক পরিস্থিতিতে, যখন সবকিছু থমকে গিয়েছিল, তখন খেলাধুলা, বিশেষ করে টেনিস, তাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে।
২১ বছর বয়সে এক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় লুসির জীবন ওলট-পালট হয়ে যায়। কোমর থেকে নিচের অংশে প্যারালাইসিস হওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ে। হাসপাতালে দীর্ঘ ১০ মাস কাটিয়ে যখন তিনি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছিলেন, তখন হুইলচেয়ার টেনিসের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
ব্রিটেনের বিখ্যাত হুইলচেয়ার টেনিস খেলোয়াড় পিটার নরফোকের পরামর্শে তিনি এই খেলাটি বেছে নেন। তবে, তার শুরুটা কোনো অলিম্পিক পদক জেতার স্বপ্ন নিয়ে ছিল না।
তিনি চেয়েছিলেন নিজেকে খুঁজে নিতে, খেলাধুলার আনন্দ উপভোগ করতে।
শুকেরের ক্রীড়া জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায়, তিনি শুধু একজন খেলোয়াড় নন, বরং এক অনুপ্রেরণার নাম। টোকিও ২০২০ প্যারালিম্পিকে তিনি মহিলাদের দ্বৈত বিভাগে রৌপ্য পদক জয় করেন।
২০১২ সালের লন্ডন প্যারালিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক জিতে তিনি এবং তার সহযোগী জর্ডান হুইলি প্রথম ব্রিটিশ মহিলা হিসেবে হুইলচেয়ার টেনিসে পদক জয় করেন। উইম্বলডনসহ গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে আটবার জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে তার ঝুলিতে রয়েছে ১২৯টি একক ও দ্বৈত খেতাব। শুধু তাই নয়, ২০২১ সালের প্যারালিম্পিকে তিনি গ্রেট ব্রিটেনের পতাকা বহন করার সম্মানও অর্জন করেন।
শুকেরের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে সীমাহীন আত্মবিশ্বাস ও ইচ্ছাশক্তি। দুর্ঘটনার পর যখন অনেকেই তাকে খেলা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, তখন তিনি প্রমাণ করেছেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সাফল্যের পথে বাধা হতে পারে না।
তিনি সবসময় নিজের চেয়ে কম সুযোগ পাওয়া খেলোয়াড়দের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করেন এবং তাদের থেকে ভালো করার চেষ্টা করেন।
হুইলচেয়ার টেনিসের প্রসারেও লুসি শুকেরের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি মনে করেন, এই খেলাটিকে আরও বেশি জনপ্রিয় করতে হবে এবং সাধারণ টেনিস টুর্নামেন্টগুলোর সঙ্গে এর সমন্বয় ঘটানো প্রয়োজন।
এর মাধ্যমে খেলোয়াড়দের পরিচিতি বাড়ে এবং স্পন্সরশিপের সুযোগও বাড়ে।
খেলাধুলার পাশাপাশি, লুসি বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমেও সক্রিয়। তিনি ‘এলটিএ ইয়ুথ অ্যাম্বাসেডর’-এর দায়িত্ব পালন করেন এবং স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে টেনিস খেলার প্রসারে কাজ করেন।
তার মতে, খেলাধুলা তরুণ প্রজন্মের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
লুসীর মতে, সমাজে প্রতিবন্ধীদের জন্য সুযোগ তৈরি করা প্রয়োজন। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে তিনি বিশ্বজুড়ে শহর ও জনপদগুলোতে প্রতিবন্ধীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
খেলা জীবনের পাশাপাশি, লুসি বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করেছেন এবং খেলাধুলার মাধ্যমে নিজের স্বাধীনতা উপভোগ করেছেন। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে নিজের ৩৬তম একক শিরোপা এবং বাটন রুজে ৯৩তম দ্বৈত শিরোপা জিতেছেন।
লুসি শুকেরের জীবন প্রমাণ করে, ইচ্ছাশক্তি থাকলে সব বাধা পেরিয়ে সাফল্যের শিখরে ওঠা যায়। খেলাধুলা শুধু শারীরিক সুস্থতাই দেয় না, বরং জীবনের প্রতি নতুন করে ভালোবাসাও জন্মায়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান