যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি: ক্ষমতা প্রদর্শনের এক দৃষ্টান্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে, রাষ্ট্রপতি যা চেয়েছেন, তাই সমর্থন করেছে। অভিবাসন বিষয়ক বিতণ্ডা থেকে শুরু করে সরকারি ব্যয় সংকোচ—বিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের পক্ষে জোরালোভাবে দাঁড়িয়েছে তারা।
অনেক সময় আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম এড়িয়ে, দ্রুত আপিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবার, আদালতের আদেশকে নিজেদের সুবিধামতো ব্যাখ্যা করার অভিযোগও উঠেছে।
মার্কিন বিচার বিভাগের এই ধরনের কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিচারক পাওলা জেনিস যেমন অভিবাসন বিষয়ক একটি মামলায় মন্তব্য করেছেন, বিচার বিভাগ আদালতের নির্দেশকে ‘আইন ও যুক্তির পরিপন্থী’ভাবে ব্যাখ্যা করছে।
মূলত, অভিবাসী কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে ভুল করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনার প্রেক্ষাপটে বিচার বিভাগ যে ভূমিকা পালন করেছে, তা সমালোচিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার প্রত্যাবর্তনে যেন সহায়তা করা হয়।
কিন্তু বিচার বিভাগ এই নির্দেশের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কার্যত কিছুই করেনি, বরং তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য কেবল একটি উড়োজাহাজ পাঠানোর প্রস্তাব দেয়।
বিভিন্ন সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপের সমর্থনে যুক্তি দিতে গিয়ে বিচার বিভাগের আইনজীবীরা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার ওপর জোর দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, যেহেতু প্রেসিডেন্ট জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, তাই তাঁর সিদ্ধান্ত প্রায় প্রশ্নাতীত।
এমনকি, ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির সমর্থনে যুক্তি দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, এই নীতি জনগণের সমর্থন লাভ করেছে। তবে, বিচারক আলভিন হেলারস্টাইন এর জবাবে বলেছিলেন, “আমরা এখানে জনপ্রিয়তার কথা বলছি না। আমরা আইনের শাসনের কথা বলছি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপ নির্বাহী বিভাগের অভ্যন্তরীণ আইনি নিয়ম-কানুন অনুযায়ী অনুমোদন পাওয়ার যোগ্য ছিল না। এমনকি, রাজনৈতিক কারণে কিছু আইনি firm-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা-ও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
বিচার বিভাগের এমন ভূমিকার সমালোচনা করে প্রাক্তন কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি আইনের শাসনের পরিপন্থী। তাঁরা মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে বিচার বিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা কমিয়ে দেবে।
বিভিন্ন মামলার শুনানিতে বিচার বিভাগের আইনজীবীদের প্রস্তুতি এবং তথ্যের অভাবও দেখা গেছে। কিছু ক্ষেত্রে, তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।
যেমন, ‘ডগ’ (DOGE) বিষয়ক মামলায় এলন মাস্কের ভূমিকা কী ছিল, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, আইনজীবীরা সুস্পষ্ট কোনো জবাব দিতে পারেননি। অভিবাসন বিষয়ক কিছু নীতি নির্ধারণে কারা জড়িত ছিলেন, সে বিষয়েও তাঁরা অন্ধকারে ছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিচার বিভাগের এই ধরনের কার্যক্রম শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। এতে করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা কমবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন