যুক্তরাষ্ট্রের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত, যা ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোকে ফেডারেল সাহায্য প্রদানের ক্ষেত্রে কঠোরতা আনতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। এমনটাই জানা যাচ্ছে, যা আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের আগে অনেক রাজ্যের জন্য বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (FEMA)-র এক অভ্যন্তরীণ স্মারকলিপিতে এই পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, FEMA-র ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক ক্যামেরন হ্যামিল্টন, যিনি ট্রাম্পের একজন নিয়োগপ্রাপ্ত, একটি দীর্ঘ প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন। এই প্রস্তাবনায় প্রেসিডেন্টের কাছে জরুরি অবস্থার ঘোষণা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত শহর ও রাজ্যগুলোতে ফেডারেল সাহায্য কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
এই ধরনের পরিবর্তন বিশেষ করে সেই রাজ্যগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে, যারা বর্তমানে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত নয়।
স্মারকলিপিতে জনসাধারণের সহায়তার জন্য রাজ্যগুলোর যোগ্যতা অর্জনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে ফেডারেল সাহায্য পাওয়ার জন্য একটি রাজ্যকে আগের তুলনায় চারগুণ বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
এছাড়া, ফেডারেল সরকার কর্তৃক পুনরুদ্ধারের খরচ কমানো, সহায়তার জন্য যোগ্য সুবিধার পরিমাণ সীমিত করা এবং তুষারঝড়ের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগের জন্য কোনো সাহায্য না দেওয়ার মতো বিষয়গুলোও বিবেচনা করা হচ্ছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, দুর্যোগের তীব্রতা মূল্যায়নের জন্য FEMA বর্তমানে যে ‘পার ক্যাপিটা ইন্ডিকেটর’ (PCI) ব্যবহার করে, তা ১.৮৯ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৭.৫৬ ডলার করার কথা বলা হয়েছে।
এর ফলে ছোট আকারের দুর্যোগের জন্য ফেডারেল সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে এবং বৃহত্তর দুর্যোগে অর্থ সাহায্য কেন্দ্রীভূত করা হবে। হ্যামিল্টন যুক্তি দেখিয়েছেন, এই পরিবর্তনের ফলে ফেডারেল সরকারের শত শত মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে এবং মূল্যস্ফীতি ও বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে এটি সঙ্গতিপূর্ণ হবে।
তবে, এই পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোর কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, এই ধরনের পরিবর্তন হলে ভবিষ্যতে দুর্যোগের সময় তাদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে।
বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলো, যেখানে প্রায়ই গুরুতর ক্ষতি হয়, কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব কম থাকে, তারা এই নতুন নিয়মের কারণে ফেডারেল সাহায্য থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
আগের প্রশাসনগুলোও PCI বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছে। তবে, হ্যামিলটনের প্রস্তাবিত এই পরিবর্তন নজিরবিহীন।
সমালোচকদের মতে, এই পরিবর্তন এমন রাজ্যগুলোর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে, যেখানে দুর্যোগের ঝুঁকি বেশি এবং তাদের আর্থিক সক্ষমতা কম। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আরও বেশি সময় নেবে।
এই প্রস্তাবনার সঙ্গে সম্প্রতি কিছু রাজ্যের ফেডারেল সাহায্য প্রত্যাখ্যানের সম্পর্ক থাকতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে আরকানসাস, ওয়াশিংটন এবং কেনটাকি।
গত বছর, ওয়াশিংটন রাজ্যে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার পরেও ফেডারেল সাহায্য প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। যদিও রাজ্যের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, তারা দুর্যোগের জন্য প্রয়োজনীয় সব মানদণ্ড পূরণ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফেডারেল সরকারের এই ধরনের পদক্ষেপগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় রাজ্য ও স্থানীয় সরকারগুলোর উপর আরও বেশি দায়িত্ব চাপিয়ে দেবে।
তবে, অনেক রাজ্যের পক্ষ থেকে এই পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: CNN