শিরোনাম: বাণিজ্য যুদ্ধের আঁচ: প্রস্তুত থাকতে হবে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব আসতে পারে
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের ডামাডোল আবারও বাড়ছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে চীনের পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কের (ট্যারিফ) ফলস্বরূপ বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তার ঢেউ লেগেছে বিশ্বজুড়ে।
যদিও এর সরাসরি প্রভাব এখনো অনেকের কাছে দৃশ্যমান নয়, তবে এর গভীরতা বাড়ছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।
বাণিজ্য যুদ্ধ মূলত দুটি প্রধান ধাক্কা সৃষ্টি করে: একদিকে, বিদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি, যা সরাসরি ব্যবসার খরচ বাড়ায়, অন্যদিকে শুল্কের কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা।
এই অনিশ্চয়তা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলস্বরূপ, অনেক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিজি বেবি’ নামক একটি ছোট ব্যবসার কথা ভাবুন, যারা শিশুদের খেলনা তৈরি করে।
চীনের একটি কারখানায় তারা তাদের সবচেয়ে বড় একটি অর্ডার দেয়, যার মূল্য ছিল ১৫৮,০০০ মার্কিন ডলার।
কিন্তু শুল্কের কারণে সেই পণ্যগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রের গুদামে আটকা পড়েছে।
যদি তারা এই পণ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়, তাহলে তাদের অতিরিক্ত ২,২৯,১০০ মার্কিন ডলার শুল্ক দিতে হবে।
এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসাটি বন্ধ হওয়ারও সম্ভবনা রয়েছে।
এই ধরনের সমস্যাগুলো কেবল একটি ব্যবসার নয়, বরং অনেক ছোট ও মাঝারি ব্যবসার (এসএমই) ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে।
এই ব্যবসাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে প্রায় অর্ধেক কর্মসংস্থান তৈরি হয়।
শুল্কের কারণে ব্যবসার খরচ বাড়লে, ব্যবসায়ীরা হয় সেই খরচ ক্রেতাদের ওপর চাপিয়ে দিতে বাধ্য হবেন, অথবা তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে।
সাধারণ মানুষের জীবনে এর প্রভাব পড়বে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে।
ইতোমধ্যে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়েছে যে, ট্রাম্পের শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৫ সালে মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
অর্থাৎ, জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়বে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে সবার ওপর সমানভাবে পড়বে না।
শুরুতে, ব্যবসায়ীরা এর শিকার হবেন, যেমনটা আমরা ‘বিজি বেবি’র ক্ষেত্রে দেখেছি।
তবে, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হিসেবে বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমতে পারে এবং দাম আরও বাড়তে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এপ্রিলের শুরুতে চীনের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্কের কারণে আমদানি কমে যাওয়ার ফলে খুব শীঘ্রই এর প্রভাব দৃশ্যমান হতে শুরু করবে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার যদিও চীনের ওপর থেকে কিছু শুল্ক কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছে, তবে ১০ শতাংশের সার্বজনীন শুল্ক কমানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।
এই শুল্কের কারণে ব্যবসার খরচ বাড়বে এবং অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে।
বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন আসছে, তার ঢেউ বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও লাগবে।
বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি, আমদানি এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
তাই, এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন