যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির বাস্তব চিত্র কি ক্রমশ প্রকাশ হয়ে পড়ছে? এমন প্রশ্ন উঠছে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে অর্থনৈতিক সাফল্যের ধারণার সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক চোখে পড়ছে।
সম্প্রতি, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সূচকগুলো তার দুর্বলতা প্রকাশ করছে।
কিছুদিন আগেও যেখানে ট্রাম্প ‘আমেরিকার সোনালী যুগ’ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন, সেখানে এখন শোনা যাচ্ছে অভিভাবকদের সন্তানদের খেলনা সামগ্রীর জন্য বেশি দাম দিতে হতে পারে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ট্রাম্পের হতাশার সুর ছিল, যা তার চীন বাণিজ্য যুদ্ধের ফলস্বরূপ বেশি দামে কম পণ্য পাওয়া যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
বুধবার প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে আমেরিকার অর্থনীতি ০.৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।
যদিও এই তথ্য তাৎক্ষণিক সংকটের ইঙ্গিত দেয় না, তবুও একে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির ওপর একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই ধরনের রিপোর্ট প্রায়ই সংশোধন করা হয়, এবং একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক চক্রবৃদ্ধি খুবই স্বাভাবিক।
তবে এই প্রতিবেদনের রাজনৈতিক এবং প্রতীকী প্রভাব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্পের জন্য, এই খারাপ অর্থনৈতিক চিত্র তার ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একদিকে, তার প্রথম ১০০ দিনের কার্যক্রমকে সবচেয়ে সফল হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছিল, সেই ধারণায় চিড় ধরেছে।
অন্যদিকে, অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে তার ভাবমূর্তির ওপরও প্রশ্ন উঠেছে, যা তার রাজনৈতিক ভিত্তি দুর্বল করে দিতে পারে।
জিডিপি রিপোর্ট (GDP report) প্রকাশিত হওয়ার পর, ট্রাম্প দ্রুত এক টুইট বার্তায় জানান, “এটা বাইডেনের বাজার, ট্রাম্পের নয়।”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি অর্থনৈতিক খারাপ ফলের দায় পূর্বসূরীর ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন।
তবে, সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্পের হঠকারী বাণিজ্য নীতি এবং বিশ্ব অর্থনীতির ওপর এর প্রভাবের কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে ভোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বিশেষ করে, যারা সবেমাত্র অবসর গ্রহণ করেছেন বা করতে যাচ্ছেন, তাদের জন্য এই পরিস্থিতি উদ্বেগের কারণ। এছাড়া, আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের কাছে জীবনযাত্রার খরচ কমানোর বিষয়ে ট্রাম্পের দেওয়া প্রতিশ্রুতি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
অর্থনীতিবিদ ল্যারি সামারস সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “গত একশ বছরে অর্থনীতির দিক থেকে সম্ভবত ট্রাম্পের প্রথম ১০০ দিন সবচেয়ে ব্যর্থ ছিল।
আমরা দেখেছি, শেয়ার বাজার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, ডলারের দাম কমেছে, বেকারত্ব এবং মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়েছে।”
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানি বেড়ে যাওয়ার কারণে জিডিপি-র এই চিত্র তৈরি হয়েছে।
তাদের মতে, বাণিজ্য শুল্ক আরোপের কারণে কোম্পানিগুলো পণ্য মজুদ করছে, যা অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরছে না।
ট্রাম্পের চীন নীতির ফলস্বরূপ খেলনার দাম বাড়ার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
যদিও এই নীতি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হতে পারে, তবে এটি সাধারণ মানুষের জন্য খেলনার খরচ বাড়িয়ে দেবে।
বর্তমানে, হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বাস্তবতাকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে।
অ্যামাজনের ওপর শুল্কের প্রকৃত খরচ উল্লেখ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের নেওয়া এই ধরনের পদক্ষেপের কারণে আমেরিকার অর্থনীতি আরও কঠিন পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন