মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সাক্ষী থাকল বিশ্ব। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত, দেশটির বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারকো রুবিওকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার (National Security Advisor) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এই পদে আসীন ছিলেন মাইক ওয়ালজ (Mike Waltz)। তাকে জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে এই ঘোষণা করা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে একদিকে যেমন রুবিওর ক্ষমতা বৃদ্ধি পেল, তেমনই ওয়ালজের বিদায় প্রমাণ করে, হোয়াইট হাউসে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে ট্রাম্প কতটা কঠোর হতে পারেন।
ওয়ালজের অপসারণের পেছনে মূল কারণ হিসেবে জানা যায়, তিনি একটি সংবেদনশীল বিষয়ে আলোচনার জন্য সাংবাদিককে সিগন্যাল গ্রুপ চ্যাটে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
হোয়াইট হাউসের সূত্র জানাচ্ছে, ওয়ালজের এই ধরনের আচরণ ট্রাম্পের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়। তাছাড়া, তার পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক কিছু পদক্ষেপও প্রেসিডেন্টকে হতাশ করেছিল।
বিশেষ করে, ইয়েমেনে সামরিক অভিযান নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সসহ অনেকে এই অভিযানের বিরোধিতা করেছিলেন।
অন্যদিকে, মারকো রুবিও দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্পের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন। অনেকের মতে, রুবিও এই মুহূর্তে ট্রাম্পের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সহযোগী।
তিনি একইসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে, প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং জেরাল্ড ফোর্ডের আমলে হেনরি কিসিঞ্জার একই ধরনের দ্বৈত ভূমিকা পালন করেছিলেন।
কিসিঞ্জার দীর্ঘ ছয় বছর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং চার বছর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
ওয়ালজের বিদায় এবং রুবিওর নতুন দায়িত্ব গ্রহণের ঘটনা মার্কিন প্রশাসনের অভ্যন্তরে এক ধরনের পরিবর্তন আনবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় অস্থিরতা এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে এর প্রভাব পড়তে পারে।
হোয়াইট হাউসের এই সিদ্ধান্তে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস কিছুটা হতবাক হয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এখনই খবরটি শুনলাম।
অবশ্যই, এটা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। সেক্রেটারি রুবিও, আপনারা সবাই জানেন, তিনি শুরু থেকেই বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে আসছেন।”
অন্যদিকে, ওয়ালজকে এমন একটি পদে পাঠানো হচ্ছে, যা তিনি সম্ভবত চাননি। জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিউইয়র্কের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট পেলেও, হোয়াইট হাউস থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২৩0 মাইল।
বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতা কাঠামোতে টিকে থাকতে হলে প্রেসিডেন্টের কাছাকাছি থাকাটা জরুরি।
এই পরিবর্তনের ফলে, ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং আগের মেয়াদের অস্থিরতা এড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে, রুবিওকে একই সঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হওয়ায়, কাজের চাপ বাড়বে।
সবমিলিয়ে, এই ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলো, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও প্রভাবিত করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন