হংকংয়ের প্রাক্তন আইনপ্রণেতা ক্লডিয়া মো-এর কারাবাসের অভিজ্ঞতা, ‘কাফকাesque’ বন্দী জীবন।
হংকংয়ের প্রাক্তন আইনপ্রণেতা ক্লডিয়া মো-কে চার বছরের বেশি সময় ধরে বন্দী থাকার পর সম্প্রতি মুক্তি দেওয়া হয়েছে। চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলটিতে ভিন্নমতাবলম্বীদের উপর চালানো দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কারামুক্তির পর তিনি তার বন্দী জীবনের অভিজ্ঞতাকে ‘কাফকাesque’ বলে বর্ণনা করেছেন।
অর্থাৎ, এক জটিল, নিয়ম-কানুনের যাঁতাকলে পড়া বন্দী জীবন।
ক্লডিয়া মো একসময় সাংবাদিকতা করতেন এবং গণতন্ত্রপন্থী সিভিক পার্টির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ২০১৬ সালে হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক আইনের আওতায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়।
এই আইনের অধীনে, সরকারবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ক্লডিয়া মো-র মুক্তি সেই প্রক্রিয়ারই অংশ।
২০২০ সালে বিতর্কিত এই নিরাপত্তা আইনটি কার্যকর হওয়ার পর হংকংয়ে ভিন্নমত প্রকাশের পরিসর উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এই আইনের মাধ্যমে মূলত বেইজিং হংকংয়ের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
পশ্চিমা দেশগুলো এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই আইনের সমালোচনা করে একে হংকংয়ের স্বাধীনতা খর্ব করার একটি পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
কারামুক্তির পর ক্লডিয়া মো তার অনুসারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং কারাগারে তার সহকর্মীদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, বন্দী জীবনে তিনি ৩০০টির বেশি বই পড়েছেন এবং ফরাসি ভাষার চর্চা করেছেন। ক্লডিয়া মো-র মতে, কারাগারের জীবন শুরুতে “অবাস্তব” মনে হলেও, ভেতরের সামাজিক পরিবেশের কারণে তিনি একাকীত্ব ও একঘেয়েমির মতো কষ্টগুলো থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
এদিকে, ক্লডিয়া মো-র মুক্তির কয়েকদিনের মধ্যেই হংকংয়ের নিরাপত্তা পুলিশ ওয়াশিংটন ভিত্তিক হংকং ডেমোক্রেসি কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক আনা কোওকের বাবা ও ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে।
তাদের বিরুদ্ধে আনা কোওকের আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে “সরাসরি বা পরোক্ষভাবে, কোনো তহবিল বা অন্য কোনো আর্থিক সম্পদ অথবা অর্থনৈতিক উৎস” লেনদেনের চেষ্টা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
হংকং একসময় একটি প্রাণবন্ত রাজনৈতিক অঙ্গন ও মুক্ত গণমাধ্যমের স্থান ছিল। কিন্তু, এই নিরাপত্তা আইনের কারণে সেখানে ভিন্নমতের স্থান সংকুচিত হয়ে এসেছে।
বেইজিং এবং হংকং সরকার এই আইনকে শহরের শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা