শিরোনাম: আমেরিকায় বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণ কমে যাওয়ার কারণ কী?
গত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণ কমে যাওয়ায় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে তৈরি হয়েছে কৌতূহল। যদিও বন্য পাখি এবং গবাদি পশুদের মধ্যে এখনো ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে, তবে মানুষের শরীরে নতুন করে সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতিতে নতুন করে সতর্কবার্তা জারি করেছেন। তারা জানতে চান, কেন হঠাৎ করে মানুষের মধ্যে বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণ কমে গেল?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির প্যান্ডেমিক সেন্টারের পরিচালক জেনিফার নুজ্জো বলেন, “আমরা জানি না কেন নতুন করে সংক্রমণ হচ্ছে না। সম্ভবত খামারের শ্রমিকদের মধ্যে এখনো সংক্রমণ ঘটছে, কিন্তু তা ধরা পড়ছে না।”
যুক্তরাষ্ট্রে গত ১৪ মাসে ৭০ জনের বেশি মানুষের শরীরে বার্ড ফ্লু ধরা পড়েছে। এদের অধিকাংশই দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামারের শ্রমিক।
এদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে আক্রান্তদের বেশিরভাগের অসুস্থতা ছিল মৃদু। রোগের প্রকোপ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে পরীক্ষা করার অনীহার বিষয়টিকেও অনেকে দায়ী করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC) জানিয়েছে, সর্বশেষ সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে ফেব্রুয়ারির শুরুতে, নেভাদা, ওহাইও এবং ওয়াইমিং রাজ্যে। একসময় বার্ড ফ্লু’র কেন্দ্রবিন্দু ছিল ক্যালিফোর্নিয়া।
সেখানকার খামারে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে সংক্রমণের হার ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বর্তমানে সেখানে পরীক্ষা এবং আক্রান্তের সংখ্যা দুটোই কমেছে। রাজ্য সরকারের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর শেষের দিকে প্রতি মাসে অন্তত ৫০ জনের পরীক্ষা করা হলেও, মার্চ মাসে মাত্র ৩ জন এবং এপ্রিল ও মে মাসে একজনও পরীক্ষা করাননি।
ক্যালিফোর্নিয়ায় এখন পর্যন্ত ৩৮ জনের শরীরে H5N1 বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যাদের মধ্যে ১৪ জানুয়ারির পর নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি।
বার্ড ফ্লু’র এই হ্রাস পাওয়ার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে একটি বিষয় মনে করা হচ্ছে, বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণ সাধারণত শরৎ ও শীতকালে বাড়ে।
এর কারণ হিসেবে বন্য পাখিদের পরিযায়ী প্রবণতাকে দায়ী করা হয়। সিডিসি’র এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সম্ভবত এটি একটি স্বাভাবিক এবং সাময়িক ঘটনা।
তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, হালকা সংক্রমণের অনেক ঘটনাই হয়তো শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এর কারণ হতে পারে বার্ড ফ্লু পরীক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি নজরদারির অভাব।
টেক্সাস মেডিকেল ব্রাঞ্চের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. গ্রেগরি গ্রে বলছেন, সিডিসি নতুন কোনো সংক্রমণ শনাক্ত করতে না পারায় তিনি চিন্তিত নন।
কিন্তু মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মাইকেল ওস্টারহোম এবং আরও কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, হালকা সংক্রমণগুলো শনাক্ত করা যাচ্ছে না।
তাদের মতে, এই বিষয়ে নজরদারি দুর্বল হয়ে পড়ছে।
উইসকনসিন ভেটেরিনারি ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরির পরিচালক কেইথ পোলসেনের মতে, মার্কিন কৃষি বিভাগ এবং খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের ভেটেরিনারি বিভাগের কর্মীরা পদত্যাগ করায় বার্ড ফ্লু’র ওপর নজরদারি কমে যেতে পারে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট অ্যাঞ্জেলা রাসমুসেনের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকে নজরদারি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
তিনি মনে করেন, অভিবাসী শ্রমিকরা হয়তো সংক্রমণের কথা জানালে বিতাড়িত হওয়ার ভয়ে পরীক্ষা করাচ্ছেন না।
সিডিসি’র মতে, সাধারণ মানুষের জন্য ঝুঁকি এখনো কম। তবে যারা গবাদি পশু ও পোল্ট্রির সঙ্গে কাজ করেন বা বন্য পাখির সংস্পর্শে আসেন, তাদের ঝুঁকি বেশি।
বার্ড ফ্লু’র ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি মোকাবিলায় গবেষণা চলছে।
টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা দুগ্ধ খামারের শ্রমিকদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করছেন। সিডিসি’র প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলার অনুদানে এই গবেষণাটি জুলাই মাসে শেষ হওয়ার কথা।
মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্রিস্টেন কোলম্যানের মতে, বিড়ালদের মধ্যেও বার্ড ফ্লু’র নজরদারি বাড়ানো দরকার।
কারণ, ২০১৪ সাল থেকে বিড়ালদের মধ্যে বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণ বাড়ছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস