যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি প্রায়ই ব্যবসায়ীদের জন্য এক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। তাঁর আকস্মিক সিদ্ধান্তগুলোর কারণে ব্যবসায়ীরা নতুন করে পরিকল্পনা করতে দ্বিধা বোধ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
এই নীতির সবচেয়ে বড় শিকার হয়েছে চীন, মেক্সিকো ও কানাডার মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলো। ট্রাম্পের এই নীতিমালার কারণে অনেক সময় শুল্কের হার পরিবর্তন হয়, যা ব্যবসায়ীদের জন্য বেশ কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি মেক্সিকো এবং কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, যা পরে এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। আবার চীনের থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এই ধরনের ঘন ঘন পরিবর্তন ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে কঠিন করে তোলে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতির কারণে শুধু ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, বরং এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের উপরও। শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়ে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া, ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ করতে দ্বিধা বোধ করছেন, ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই নীতি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য এক বিরাট অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। কারণ, তাদের বিশ্বজুড়ে পণ্য বিক্রি করতে হয় এবং বিভিন্ন দেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এই অনিশ্চয়তা ব্যবসার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অনেকেই এখন নতুন ব্যবসার পরিকল্পনা স্থগিত করছেন।
এই বাণিজ্য নীতির ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ডলারে হিসাব করলে, যাদের ব্যবসার পরিমাণ বছরে প্রায় আট লক্ষ টাকার নিচে, তাদের জন্য শুল্কের বোঝা বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তারা নতুন কোনো চুক্তি করতে পারছেন না, কারণ শুল্কের বিষয়টি তাদের কাছে অনিশ্চিত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্য নীতির কারণগুলো স্পষ্ট নয়। কখনো তিনি সীমান্ত সুরক্ষার কথা বলেন, আবার কখনো শুল্ক থেকে পাওয়া রাজস্বের কথা উল্লেখ করেন। এই অস্পষ্টতার কারণে, কবে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা বলা কঠিন।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক সংস্থাগুলোর মতে, ট্রাম্পের এই ধরনের নীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ। এর ফলে অনেক দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্পর্কও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
তথ্য সূত্র: সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।