মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা খাতে সরকারি অনুদান কমানোর সিদ্ধান্তের জেরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে গবেষণা কার্যক্রম, শিক্ষক নিয়োগ এবং ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। দেশটির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় ডিউক ইউনিভার্সিটি এই পরিস্থিতিতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (National Institutes of Health – NIH) থেকে প্রাপ্ত অনুদানের ওপর নির্ভরশীলতা রয়েছে ডিউক ইউনিভার্সিটির। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতিমালার কারণে এই অনুদান উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ডিউক ইউনিভার্সিটি গত অর্থবছরে এনআইএইচ থেকে প্রায় ৫৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৬৩৮০ কোটি টাকা) অনুদান পেয়েছিল। এই মুহূর্তে, অনুদান কমানোর প্রক্রিয়াটি আদালতের আদেশের কারণে সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এর মধ্যে নতুন নিয়োগ বন্ধ করা, গবেষণা কার্যক্রম সীমিত করা এবং সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির মোকাবিলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে, মার্কিন সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালন ব্যয়ের একটি অংশ বহন করে থাকে। কোনো বিজ্ঞানী ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে গবেষণা প্রকল্পের জন্য অনুদান পেলে, সরকার সেই অনুদানের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়, যা ‘পরোক্ষ খরচ’ হিসেবে পরিচিত। ডিউক ইউনিভার্সিটিতে এই ‘পরোক্ষ খরচের’ হার ছিল প্রায় ৬১ শতাংশ। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এই হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শুধু তাই নয়, এনআইএইচ-এর পক্ষ থেকে নতুন গবেষণা প্রকল্পের অনুমোদনও কমে গেছে। গত বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে যেখানে ১৬৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেখানে চলতি বছর একই সময়ে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬৪টিতে। ডিউক ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিন-এর ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই স্কুলের গবেষণা কার্যক্রমের ৭৫ শতাংশেরও বেশি অর্থ আসে এনআইএইচ থেকে। নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে, পিএইচডি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমানো হয়েছে এবং চলমান গবেষণা প্রকল্পগুলো চালিয়ে যাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
অধ্যাপক ডোনাল্ড ম্যাকডনেল, যিনি ডিউক ইউনিভার্সিটির ফার্মাকোলজি ও ক্যান্সার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষক, জানান, তাঁর গবেষণাগার গত ৩০ বছরে এনআইএইচ থেকে প্রায় ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৪৪০ কোটি টাকা) অনুদান পেয়েছে। তাঁর গবেষণাগারে তৈরি হওয়া একটি ওষুধ ২০১৯ সালে মেটাস্ট্যাটিক স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু অনুদানের পরিমাণ কমে গেলে ক্যান্সার কোষ তৈরি ও সংরক্ষণে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং রাসায়নিক দ্রব্য কেনা কঠিন হয়ে পড়বে। এমনকি কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
ডিউক ইউনিভার্সিটির ভাইস ডিন কলিন ডাকেট বলেন, পরিস্থিতি এখন ‘ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের’ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। আগে তাঁর কাজ ছিল সেরা বিজ্ঞানীদের আকৃষ্ট করা এবং তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা। এখন তাঁর প্রধান কাজ হলো, কীভাবে এই সংকট থেকে উত্তরণ করা যায়, সেই পথ খুঁজে বের করা।
গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ কমানোর এই সিদ্ধান্তের ফলে শুধু ডিউক ইউনিভার্সিটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, এর প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। অনেক বিজ্ঞানী এখন বেসরকারি সংস্থা ও বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হবেন, যেখানে অনুদানের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম থাকে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস