আশির দশকে ফ্যাশন ও সংস্কৃতির এক নতুন উন্মাদনা, ডিজিটাল দুনিয়ার এই যুগেও কেন এত প্রাসঙ্গিক?
ফ্যাশন, শিল্পকলা এবং সঙ্গীতের জগতে আশির দশক ছিল এক অসাধারণ সময়। উজ্জ্বল পোশাক, নতুন ধরনের সঙ্গীতের জন্ম, ক্লাব সংস্কৃতির উন্মাদনা—এই সবকিছু মিলে তৈরি হয়েছিল এক ভিন্ন জগৎ। সম্প্রতি, লন্ডনে কয়েকটি প্রদর্শনী সেই সময়ের সংস্কৃতিকে নতুন করে তুলে ধরেছে, যা বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে কৌতূহল জাগিয়েছে। স্মার্টফোন আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই যুগে, আশির দশকের উন্মুক্ত সংস্কৃতি যেন এক অন্যরকম আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে।
ন্যাশনাল পোর্ট্রেট গ্যালারিতে ‘দ্য ফেস’ ম্যাগাজিনের ছবিগুলো সেই সময়ের ফ্যাশন ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। এই ম্যাগাজিনটি ব্রিটেনের সংস্কৃতিতে এক নতুন দিগন্ত এনেছিল। এখানে ৮০ জনের বেশি আলোকচিত্রীর কাজ রয়েছে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই প্রদর্শনীতে দেখা যায়, সেই সময়ের তরুণ প্রজন্মের ফ্যাশন সচেতনতা এবং তাদের রুচিবোধ।
অন্যদিকে, টেট মডার্নে ‘লেইঘ বোয়েরি!’ প্রদর্শনীতে আশির দশকের ফ্যাশন ও ক্লাব সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল চিত্র ফুটে উঠেছে। বোয়েরি ছিলেন এই সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, যিনি তাঁর ব্যতিক্রমী পোশাকের জন্য পরিচিত ছিলেন। বার্মন্ডসির ফ্যাশন অ্যান্ড টেক্সটাইল মিউজিয়ামে ‘আউটলজ: ফ্যাশন রেনেগেডস অফ 80স লন্ডন’ প্রদর্শনীতে দেখা যায়, সেই দশকের স্বাধীন ডিজাইনারদের সৃষ্টিশীলতা। ক্রিস্টোফার নেমেথ, জুডি ব্লেম-এর মতো শিল্পী এবং জন গ্যালিয়ানোর মতো প্রতিষ্ঠিত ডিজাইনারদের শুরুর দিকের কাজগুলো এখানে বিশেষভাবে প্রদর্শিত হয়েছে।
আশির দশকের এই পুনরুজ্জীবনের কারণ কী? সম্ভবত, এর কারণ হলো সেই সময়ের সৃজনশীল স্বাধীনতা। লেখক এবং কিউরেটর ইকো এশুন বলেন, “আশির দশক ছিল ডিজিটাল প্রযুক্তির আবির্ভাবের আগের সময়। সেই সময়ে সবকিছু স্থির চিত্র ও কথায় আবদ্ধ ছিল। সেই কারণে এটি আমাদের বর্তমান সময়ের থেকে কিছুটা দূরে, আবার আকর্ষণীয়ভাবে কাছাকাছি।” ‘দ্য ফেস’ ম্যাগাজিন সেই সময়ের সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছিল, যেখানে ফ্যাশন, ডিজাইন এবং নতুন ধরনের আইডিয়াকে স্বাগত জানানো হতো।
আশির দশকে ছিল ব্র্যান্ডের প্রভাবমুক্ত এক সময়। মানুষ নিজেদের পোশাক তৈরি করত, নানা ধরনের কাপড় ও উপকরণ ব্যবহার করত। সেই সময়ের সৃজনশীলতা ছিল অভাবনীয়। সে সময় সরকারি কিছু প্রকল্পের মাধ্যমে তরুণদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো, যা সৃজনশীলতাকে আরও উৎসাহিত করেছিল।
আজকের দিনে, ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে সবকিছু হাতের মুঠোয় চলে এলেও, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আশির দশকের প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। তারা সেই সময়ের সৃজনশীল স্বাধীনতা, বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সময় এবং প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা থেকে দূরে থাকার সুযোগকে অনুভব করতে চায়।
আশির দশকের সংস্কৃতি, ফ্যাশন এবং সঙ্গীতের এই পুনরুজ্জীবন প্রমাণ করে, অতীতের অনেক কিছুই বর্তমানের জন্য আজও প্রাসঙ্গিক। ডিজিটাল বাংলাদেশের এই যুগে, যখন সবকিছু দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে আশির দশকের সংস্কৃতি আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়, সৃজনশীলতার গুরুত্ব কতখানি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান