অভিনয়ে মাদকাসক্তি এবং মাতলামি: পর্দার পেছনের কৌশল
মাদকাসক্তি অথবা মদ্যপানের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা অভিনেতাদের জন্য একটি কঠিন কাজ। দর্শকদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য, তাদের শারীরিক ভাষা, অভিব্যক্তি এবং কণ্ঠস্বরে আনতে হয় পরিবর্তন। কিন্তু বাস্তবে তারা তো মাদক সেবন করেন না বা মদ্যপানও করেন না। তাহলে কীভাবে তারা এই কাজটি করেন? আসুন, সেই রহস্যের গভীরে যাওয়া যাক।
সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘মার্চিং পাউডার’-এ অভিনেতা ড্যানি ডায়ার-কে দেখা যায় নেশাগ্রস্ত চরিত্রে অভিনয় করতে। সিনেমাটিতে মাদক এবং সহিংসতার দৃশ্য রয়েছে। এছাড়াও, ‘ইন্ডাস্ট্রি’ এবং ‘ইউফোরিয়া’-র মতো জনপ্রিয় টিভি সিরিজেও মাদকাসক্তি এবং মদ্যপানের দৃশ্য রয়েছে। এসব দৃশ্যে অভিনেতাদের অসাধারণ অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করে।
আসলে, ক্যামেরার সামনে মাদকাসক্তি বা মাতলামির অভিনয় করাটা মোটেও সহজ নয়। উদাহরণস্বরূপ, ‘ইন্ডাস্ট্রি’র অভিনেতা সাগর রাদিয়া-র কথা বলা যায়। তিনি বলেন, “আমি তেমন মদ্যপান করি না, মাদকও নিই না, এমনকি ধূমপানও করি না। কিন্তু যখন বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যরা আমার অভিনয় দেখে, তখন তারা বলে, ‘তোকে দেখে মনে হয় তুই ভালোই পারিস!’” এই ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অভিনেতাদের অনেক বেশি মনোযোগী হতে হয়। রাদিয়া-কে তার চরিত্রের গভীরতা ফুটিয়ে তোলার জন্য সবসময় চেষ্টা করতে হয়েছে স্বাভাবিক থাকার। তিনি জানান, মাতাল মানুষের মতো অভিনয় করার চেয়ে বরং স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করাই আসল।
তবে, অভিনয়ের এই দিকটি সবসময় এত সহজ ছিল না। অতীতে, অনেক অভিনেতা চরিত্রকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য কঠিন পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। যেমন, ‘দ্য সোপরানোস’-এর অভিনেতা জেমস গ্যান্ডলফিনি এবং মাইকেল ইম্পেরিয়লি-কে একবার মদ্যপ অবস্থায় গাছের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তারা পাহাড় থেকে পড়ে না যান। ‘উইথনাইল অ্যান্ড আই’ ছবিতে, পরিচালক রিচার্ড ই গ্রান্ট-কে মদ্যপানের ‘রাসায়নিক স্মৃতি’ তৈরি করার জন্য মদ্যপান করতে উৎসাহিত করেছিলেন। তবে বর্তমানে সেটে মদ্যপান করা আগের চেয়ে অনেক কম হয়।
বর্তমান সময়ে, অভিনয়শিল্পীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। সেটে একজন ‘ওয়েলবিং ফ্যাসিলিটেটর’-এর (wellbeing facilitator) উপস্থিতি এখন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই পেশাদার ব্যক্তিরা অভিনেতা ও কলাকুশলীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা প্রদান করেন। এছাড়া, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমন্বয়কারীও (mental health coordinator) রয়েছেন, যারা অভিনেতাদের চরিত্র অনুযায়ী নিজেদের প্রস্তুত করতে সাহায্য করেন। তারা অভিনেতাদের শ্বাস-প্রশ্বাস, মুখের পেশী এবং কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন করতে সহায়তা করেন, যাতে মাদক বা মদ্যপানের প্রভাবগুলো পর্দায় ফুটিয়ে তোলা যায়।
অভিনয়ের এই দিকটি একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনই অনেক অভিনেতার কাছে এটি আনন্দেরও। ‘দ্য হোয়াইট লোটাস’–এর অভিনেতা মারে বার্টলেট-এর মতে, এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করাটা ছিল তার জন্য ‘উপহারস্বরূপ’।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান