ইতালীয় লেখক ভিনসেনজো ল্যাট্রোনিকো-র নতুন উপন্যাস ‘পারফেকশন’ বর্তমানে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে বার্লিনে, যেখানে ডিজিটাল জগতের কয়েকজন মানুষের জীবন ও তাদের মানসিক টানাপোড়েনকে তুলে ধরা হয়েছে।
মূলত, ফরাসি লেখক জর্জেস পেরেক-এর ১৯৬০ দশকের উপন্যাস ‘থিংস’-এর অনুপ্রেরণা নিয়েই ল্যাট্রোনিকো এই উপন্যাসটি লিখেছেন।
নিজের এই নতুন উপন্যাস প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ইতালির এই লেখক জানান, জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আধুনিক মানুষের অতি-উৎসাহ এবং ভালো থাকার চেষ্টা কিভাবে তাদের জীবনে জটিলতা তৈরি করে, সেটাই তিনি তুলে ধরতে চেয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে তিনি উদাহরণ দেন, কিভাবে ভালো খাবার খাওয়ার ধারণাটা একসময় স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস থেকে আরও ভালো, আরও সুন্দর – এই পর্যায়ে চলে আসে।
ল্যাট্রোনিকো-র জন্ম ইতালির রোমে, বেড়ে ওঠা মিলানে।
২০০৯ সালে তিনি বার্লিনে পাড়ি জমান, যা তার উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
২০২৩ সালে তিনি আবার মিলানে ফিরে আসেন।
বার্লিনে থাকার সময় তিনি বিভিন্ন দেশের লেখকদের সঙ্গে পরিচিত হন।
তাদের মধ্যে সাহিত্য নিয়ে আলোচনা হতো, কিন্তু নিজেদের কাজ নিয়ে তেমন কোনো কথা হতো না।
কারণ তাদের অনেকেরই একে অপরের ভাষা বোঝার সমস্যা ছিল।
লেখকের মতে, ইতালিতে তার উপন্যাস ‘পারফেকশন’ যতটা না জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি সাড়া ফেলেছে যুক্তরাজ্যে।
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ইতালীয় সাহিত্য সাধারণত অতীতের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে।
তাদের ধারণা, এই উপন্যাসটি তাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, বরং এটি যেন অন্য কোথাও ঘটা কোনো ঘটনার দলিল।
ছোটবেলায় তিনি ডিungeons & Dragons-এর মতো খেলা খেলতেন।
ফ্যান্টাসি গল্প লেখার প্রতি তার আগ্রহ ছিল, এবং ইংরেজি শেখার পেছনেও এই খেলার একটা ভূমিকা ছিল।
অনুবাদক হিসেবেও ল্যাট্রোনিকোর খ্যাতি রয়েছে।
তিনি ফ. স্কট ফিটজেরাল্ড এবং আইজ্যাক আসিমভের মতো লেখকদের কাজ অনুবাদ করেছেন।
অনুবাদ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, অন্য কারো ভাষারীতি অনুসরণ করার চেষ্টা ভাষার সীমানা আরও বিস্তৃত করে।
রাজনৈতিক কারণেও তিনি একসময় ইতালি ছেড়েছিলেন।
একুশ শতকের শুরুতে মিলানে তিনি একটি আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, যেখানে তারা একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম চালাতেন।
কিন্তু সেই আন্দোলনে তারা হেরে যান।
এরপর তিনি এমন একটি জায়গায় যেতে চেয়েছিলেন যেখানে নাগরিক হিসেবে তার কোনো পরিচয় থাকবে না, যেখানে তিনি নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েই ব্যস্ত থাকতে পারবেন।
ভিনসেনজো ল্যাট্রোনিকোর ‘পারফেকশন’ বইটি আধুনিক জীবনের জটিলতা এবং মানুষের ভেতরের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে নতুনভাবে তুলে ধরেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান