আমার স্ত্রী এবং আমি দুজনেই বাগান করতে ভালোবাসি, তবে মাঝে মাঝে এই শখটি বেশ ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের ছোট একটি বাগান আছে, তবে রান্নাঘরের চেয়ে বড়।
বাগানের কাজেরও একটা ভাগাভাগি আছে আমাদের মধ্যে।
ঘাস, গাছ এবং পেছনের দিকের উঁচু বেডের দায়িত্ব আমার, আর লম্বা বেডগুলোর দেখাশোনা করে আমার স্ত্রী।
সামনের বাগানটা যদিও ঋতুভিত্তিক— মে মাস পর্যন্ত সেটির দায়িত্বে থাকে আমার স্ত্রী, এরপর আমি হাল ধরি।
সাধারণত আমরা বাগান করার সময় খুব একটা কথা বলি না, তবে কাজ শেষে দু’জনের মধ্যে আলোচনা হয় কে কতটুকু কাজ করেছে।
“এই দেখ, আমি পুরো বেডটা আগাছামুক্ত করেছি,” আমার স্ত্রী আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে।
আমিও পাল্টা জবাব দিই, “আমি অনেকগুলো গাছের ডাল কেটেছি, আর ভেঙে যাওয়া বেড়াটা মেরামত করেছি।”
“আমি ১৫,০০০ পদক্ষেপ হেঁটেছি, জিনিসপত্র আনা-নেওয়ার জন্য,” সে যোগ করে।
“আমি তো ছয়টা নতুন ট্রেলিসের অংশ লাগিয়েছি,” আমি বলি।
“ওটা তো গত বছর করেছিলে,” সে মনে করিয়ে দেয়।
“আমি এত কঠোর পরিশ্রম করেছি যে আমার ফোনের আঙুলের ছাপও এখন আর কাজ করে না,” আমি উত্তর দিই।
“মিথ্যে কথা,” সে হাসতে হাসতে বলে।
কিন্তু এটা সত্যি।
মাঝে মাঝে মনে হয়, কাজের ফাঁকে যেমন কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া দরকার, তেমনি বাগান করার সময়ও একটু বিশ্রাম নিয়ে ইমেইল চেক করা উচিত।
আমি আমার স্ত্রীকে দেখাই, কীভাবে আমার ফোলা, ময়লা আঙুল ফোনের স্ক্রিনে ধরলে ‘আবার চেষ্টা করুন’ লেখাটা দেখাচ্ছে।
প্রায় আধা ঘণ্টা কাজ করার পর আমরা দু’জনে ডাস্টবিন নিয়ে ঝগড়া শুরু করি।
“দয়া করে হ্যান্ড গ্লাভস পরো,” সে বলে।
“আমি চাই তুমি ওটা উঠিয়ে সামনে নিয়ে যাও। বুধবার লোক আসবে।”
আমি বলি, “এটা অনেক ভারী।”
“কোমরে জোর দাও,” সে বলে।
আমি বললাম, “আমার জন্য ভারী না, ডাস্টবিন ওয়ালাদের জন্য ভারী হবে।
তারা এটা নিবে না।”
“তার মানে, তোমার এইসব করতে ভালো লাগছে না,” সে উত্তর দেয়।
আমি ডাস্টবিনের ঢাকনা তুলে বললাম, “এখানে একটা কলা আছে।”
“তো কি হয়েছে? ওটা তো পচে গেছে।”
“কলা তো বাগানের আবর্জনা নয়, এটা খাবার বর্জ্য।
তারা এটা নিবে না,” আমি বললাম।
আমার স্ত্রী বলল, “তারা কি জানে যে আমি হয়তো এখানে কলা গাছ বানাচ্ছি?”
আমি বললাম, “যদি একটা আলু হতো, তাহলে আমি তোমার যুক্তি মেনে নিতাম।”
“তাহলে তুমি কি করতে বলো?”
“দু’দিনের জন্য ঢাকনা খোলা রাখো।
সব শুকিয়ে হালকা হয়ে যাবে,” আমি বললাম।
“ছিঃ, কী অলস তুমি!” সে বলল।
আমি বললাম, “বাগান করা আমার জন্য খুব আরামদায়ক।
তোমার হয় না?”
বাগান করা আরামদায়ক হতে পারে, কিন্তু এর শেষ নেই।
এক ইঞ্চি জায়গা পরিষ্কার করলে মনে হয় যেন আরও অনেক কাজ বাকি।
আপনি হয়তো একদিনে ছয়টা নতুন ট্রেলিস লাগালেন, আর আঠারো মাস পর দেখবেন আরও দুটো পাল্টাতে হবে।
আমরা যখন দুপুরের খাবার খাচ্ছি, তখন দেখি কুকুরটা বেডের মধ্যে গর্ত খুঁড়ছে, যেটাকে আমি একটু আগে পরিষ্কার করেছিলাম।
পুরো লনেও একই অবস্থা।
একদিন আমি আমার অফিসের শেড আর বাগানের দেয়ালের মধ্যে, প্রায় ১৮ ইঞ্চির ফাঁক দিয়ে কোনোরকমে ঢুকে মাথার ওপরের লতাগুলো কাটতে চেষ্টা করছিলাম।
গোলাপের কাঁটাগুলো আমার প্যান্টের মধ্যে দিয়ে বিঁধছিল, আর আমি নড়াচড়া করতে পারছিলাম না।
একসময় মনে হলো, আমার এত ‘থেরাপি’র দরকার নেই।
কুকুরটা মুখ বাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি বললাম, “কাউকে ডাক সাহায্য করার জন্য।”
কুকুরটা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার মাটি খোঁড়া শুরু করল।
অবশেষে, আমি দেয়ালের ওপর এবং শেডের ছাদে উঠে কোনোমতে নিজেকে মুক্ত করলাম।
আমার স্ত্রী জিজ্ঞেস করল, “ওখানে কী করছ?”
আমি বললাম, “জরিপ করছি।”
সে বলল, “দেখেছো, আমি কী করেছি!”
আমরা ঘাসজমির মাঝে দাঁড়ালাম, দু’জনের হাত ভাঁজ করা।
একটা পাখি আমার বাগানে রাখা কাঁটাওয়ালা কাঠির হাতলের ওপর বসলো।
আমার স্ত্রী বলল, “এখনও অনেক কাজ বাকি।”
আমি বললাম, “জানি।
একটা পচা ট্রেলিস আছে, যেটার কাছে পৌঁছানোই যাচ্ছে না।”
“কমপক্ষে তুমি লতাগুলো কেটে ফেলো,” সে বলল।
আমি বললাম, “আগে পাখির বাসা বাঁধার সময়টা শেষ হোক।”
“তুমি কি এটা বানিয়ে বলছ?”
আমি বললাম, “না।
এটাকে বলা হয় তত্ত্বাবধান।”
আমার মনে আছে, একবার কেউ আমাকে গাছের ডাল ছাঁটার প্রসঙ্গে পাখির বাসা বাঁধার সময়ের কথা বলেছিল।
আমার স্ত্রী জানতে চাইল, “আচ্ছা, পাখির বাসা বাঁধার সময় কবে শেষ হয়?”
আমি বললাম, “জানি না।
জুন মাস? অক্টোবর?
আমার মনে হয় এটা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে।”
আমার কথা প্রমাণ করার জন্য আমি ফোন বের করলাম।
আমার ফোন বলল, “আবার চেষ্টা করুন।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান