সেন্ট প্যাট্রিক’স ডে: বিশ্বজুড়ে আইরিশ সংস্কৃতির উদযাপন
প্রতি বছর ১৭ই মার্চ তারিখে সেন্ট প্যাট্রিক’স ডে পালন করা হয়, যা আয়ারল্যান্ডের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি উৎসর্গীকৃত একটি বৈশ্বিক উৎসব। এই দিনটি শুধু আয়ারল্যান্ডেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা আইরিশ বংশোদ্ভূত মানুষেরা অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে এই দিনটি উদযাপন করে।
সেন্ট প্যাট্রিক ছিলেন আয়ারল্যান্ডের ধর্মীয় গুরু এবং খ্রিস্টধর্ম প্রচারক। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, তিনি চতুর্থ শতকের শেষের দিকে জন্ম গ্রহণ করেন এবং আয়ারল্যান্ডে খ্রিস্টধর্ম প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এরপর ক্যাথলিক চার্চ তাকে সন্ত হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং তার স্মরণে ১৭ই মার্চ তারিখটি বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এই দিনটি শুধু ধর্মীয় গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং আইরিশ সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
এই উৎসবের শিকড় অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, একসময় আয়ারল্যান্ডে এই দিনটি ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, বিশেষ করে আমেরিকায় আইরিশ অভিবাসীদের হাত ধরে এটি একটি বৃহত্তর সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়। তারা তাদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে এবং নতুন দেশে নিজেদের স্থান তৈরি করতে এই দিনটিকে উদযাপন করত। আমেরিকাতে বসবাস করা আইরিশ সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাদের ঐতিহ্য, পোশাক, গান এবং খাবারের মাধ্যমে এই দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপন করে থাকে।
সেন্ট প্যাট্রিক’স ডে-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হলো “শ্যামরক” বা তিন পাতার ক্লোভার (এক ধরনের ঘাস)। আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে এর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এর বাইরে, চার পাতার ক্লোভারকেও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। যদিও এটি খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন, কারণ এর জিনগত বৈশিষ্ট্য খুবই বিরল।
সেন্ট প্যাট্রিক’স ডে-র উদযাপন শুধু একটি দিনের আনন্দোৎসবে সীমাবদ্ধ নয়। এটি অভিবাসী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এটি তাদের আত্মপরিচয়কে তুলে ধরে এবং নতুন পরিবেশে নিজেদের স্থান করে নিতে সহায়তা করে। এই উৎসবের মাধ্যমে, তারা তাদের শিকড়ের প্রতি সম্মান জানায় এবং বিশ্বজুড়ে তাদের সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে পহেলা বৈশাখের মতো উৎসবের সঙ্গে এর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। পহেলা বৈশাখ যেমন বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, তেমনি সেন্ট প্যাট্রিক’স ডে আইরিশ সংস্কৃতির এক গৌরবময় প্রকাশ। উভয় উৎসবই সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সম্প্রদায়ের বন্ধনকে সুদৃঢ় করে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস