ট্রাম্পের নির্দেশে ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘চূড়ান্ত’ সামরিক অভিযান
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে তিনি ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘চূড়ান্ত’ সামরিক অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। লোহিত সাগরে নৌ-চলাচলে বাধা সৃষ্টির কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের এই ঘোষণার ফলে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত হুতিদের বিরুদ্ধে ‘প্রবল প্রাণঘাতী শক্তি’ ব্যবহার করব।” তিনি আরও যোগ করেন, “তারা আমেরিকান এবং অন্যান্য দেশের জাহাজ, বিমান ও ড্রোনগুলোর ওপর সন্ত্রাস, সহিংসতা এবং জলদস্যুতার অবিরাম অভিযান চালিয়েছে।
ট্রাম্পের মতে, এই অভিযানের অংশ হিসেবে মার্কিন সেনারা হুতি ঘাঁটি, নেতা এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর বিমান হামলা চালাচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো “মার্কিন নৌ ও আকাশ সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নৌ চলাচলের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করা।
তিনি আরও বলেন, “কোনো সন্ত্রাসী শক্তি আমেরিকান বাণিজ্যিক ও নৌ জাহাজগুলোকে বিশ্বের জলপথে অবাধে চলাচল করতে বাধা দিতে পারবে না।
গত কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্র হুতিদের ক্ষমতা দুর্বল করার চেষ্টা করছে। এর কারণ হলো গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার পর হুতিরা আন্তর্জাতিক নৌপথগুলোতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। তারা ইতিমধ্যে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ছোট জাহাজের মাধ্যমে একশটির বেশি জাহাজ ও জলযানে হামলা চালিয়েছে।
এর আগে, বাইডেন প্রশাসনও হুতি অবস্থানে সীমিত আকারে হামলা চালিয়েছিল, কিন্তু তাতে আক্রমণ বন্ধ করা যায়নি। হুতিরা অবশ্য এর আগে বলেছিল যে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি বহাল থাকলে তারা লোহিত সাগরে জাহাজগুলোর ওপর হামলা বন্ধ করবে। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রতিশোধ হিসেবে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে তারা বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে, যা এই গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পথে সংকট তৈরি করেছে।
হুতিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “গাজা উপত্যকায় প্রবেশপথগুলো খোলা না হওয়া পর্যন্ত এবং খাদ্য ও ঔষধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সেখানে পৌঁছানো পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে।”
এ বছরের শুরুতে ট্রাম্প হুতিদের ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিলেন। ট্রাম্প বর্তমান প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, “হুতিদের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের দুর্বল নীতির কারণে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন, “এক বছরের বেশি সময় ধরে কোনো মার্কিন পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ সুয়েজ খাল, লোহিত সাগর বা এডেন উপসাগরের মধ্যে দিয়ে নিরাপদে চলাচল করতে পারেনি। চার মাস আগে লোহিত সাগরে যাওয়া একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজকে হুতিরা ডজনেরও বেশি বার আক্রমণ করেছে।”
তিনি ইরানের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “ইরান থেকে অর্থায়িত হুতি সন্ত্রাসীরা মার্কিন বিমানের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং আমাদের সৈন্য ও মিত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এই অবিরাম হামলার কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্ব অর্থনীতি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ক্ষতির শিকার হয়েছে, সেইসঙ্গে নিরীহ মানুষের জীবনও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
ট্রাম্প হুতিদের উদ্দেশে বলেন, “হুতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সময় শেষ হয়ে এসেছে, এবং আজকের দিন থেকেই তোমাদের আক্রমণ বন্ধ করতে হবে। যদি তা না হয়, তাহলে তোমরা আগে যা কখনো দেখোনি, তেমন ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হবে।”
ট্রাম্প ইরানের প্রতিও একটি কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ইরানকে অবিলম্বে হুতি সন্ত্রাসীদের সমর্থন বন্ধ করতে হবে। আমেরিকান জনগণ, তাদের প্রেসিডেন্ট (যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল সমর্থন পেয়েছেন) বা বিশ্বব্যাপী নৌ-চলাচল রুখলে তার ফল ভালো হবে না। যদি তোমরা এমন কিছু করো, তবে প্রস্তুত থেকো, কারণ এর জন্য আমেরিকাই তোমাদের সম্পূর্ণভাবে দায়ী করবে, এবং আমরা এতে কোনো ছাড় দেব না।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন