পরিবর্তনের বয়স থাকে না, প্রমাণ করলেন ষাটোর্ধ্ব এরিক ম্যাকবিন।
জীবনে অনেক কিছুই হয়তো পরিকল্পনা মাফিক হয় না, কিন্তু ইচ্ছাশক্তি থাকলে প্রতিটি বাঁক নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে। এমনটাই প্রমাণ করেছেন যুক্তরাজ্যের গ্রেটার ম্যানচেস্টারের বাসিন্দা এরিক ম্যাকবিন।
ষাট বছর বয়সে, যখন অনেকেই জীবনের পড়ন্ত বেলায় বিশ্রাম নিতে চান, তখন তিনি নতুন করে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
ম্যাকবিনের এই নতুন যাত্রার শুরুটা হয়েছিল তার আবাসনের আবর্জনা সমস্যা থেকে।
তিনি যে বহুতল ভবনে থাকতেন, সেখানকার ডাস্টবিনগুলো উপচে পড়ত, যা ছিল অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। ম্যাকবিন মনে করেন, এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসা দরকার।
তিনি তখন একটি হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনে কাজ করতেন এবং সেখানে উদ্ভাবন ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ছিলেন।
তিনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। ২০২০ সালে তিনি একটি মোবাইল কম্প্যাক্টিং পরিষেবা চালু করেন, যা বেশ কার্যকর ছিল।
কিন্তু কিছু বছর পর, কাঠামোগত পরিবর্তনের কারণে তিনি চাকরি হারান।
চাকরি চলে যাওয়ার পর পুনরায় কাজ খোঁজাটা ম্যাকবিনের জন্য সহজ ছিল না।
কিন্তু হার না মানা মানসিকতা নিয়ে তিনি এগিয়ে যান। তিনি নিজের ব্যবসার কথা ভাবলেন।
এর আগে অবশ্য তিনি কয়েকবার ব্যবসার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি। এবার তিনি ছোট একটি ব্যক্তিগত সঞ্চয় এবং কিছু ক্ষতিপূরণের অর্থ দিয়ে একটি গাড়ি ও যন্ত্রপাতি কিনে ফেলেন।
এরপর শুরু করেন “স্কোয়াশ” নামে তার বর্জ্য-সংকোচন পরিষেবা।
তার এই ব্যবসার মূল ধারণা হলো, ডাস্টবিনের বর্জ্যকে সংকুচিত করে জায়গার সাশ্রয় করা।
ছোটবেলা থেকেই ম্যাকবিনের স্বপ্ন ছিল একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়ার।
তিনি জানান, “আমি সব সময় চেয়েছি নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে।
১৭ বছর বয়সে বন্ধুদের নিয়ে একটি মিনিবাস ভাড়া করে উইকেন্ডে নাইট ক্লাবে যাওয়া-আসার ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি।
এরপর তিনি লন্ডন এবং মিডল্যান্ডসের মানুষের জন্য চাকরির এজেন্সি খোলেন।
এমনকি তিনি একটি খাদ্য সরবরাহকারী কোম্পানিও খুলেছিলেন, যেখানে অ্যাস্টন ভিলা ফুটবল দলের তরুণ খেলোয়াড় এবং কোভেন্ট্রি বিমানবন্দরের মতো ক্লায়েন্ট ছিল।
ম্যাকবিনের বাবা-মা ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী এবং তাদের অনুপ্রেরণা ছিল তার সাফল্যের মূল মন্ত্র।
তারা জামাইকা থেকে এসে ইংল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন।
ম্যাকবিনের বাবা কয়লা খনিতে কাজ করতেন এবং মা স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন।
তার বাবা বলতেন, “তুমি যদি চাও, তবে যেকোনো কিছুই অর্জন করতে পারো।
ছোটবেলায় ম্যাকবিন একটি পোর্শে গাড়ি দেখার পর সেটি কেনার স্বপ্ন দেখেন।
তিনি পেশা হিসেবে একটি ভারী গাড়ির চালকের লাইসেন্সও করেন, যাতে উদ্যোক্তা জীবনে কোনো সমস্যা হলে তিনি এই পেশার ওপর নির্ভর করতে পারেন।
অবশেষে, তিনি একটি পুরনো পোর্শে কেনেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ছুটিতে গাম্বিয়াতে গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন এবং তার পোর্শে বিক্রি করতে বাধ্য হন।
বর্তমানে ম্যাকবিন তার “স্কোয়াশ” ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
তিনি কম্প্যাক্টর ভ্যান চালান, নতুন ক্লায়েন্টদের সঙ্গে দেখা করেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার ব্যবসার প্রচার করেন।
তার প্রথম ক্লায়েন্ট ছিল পেনাইন কেয়ার এনএইচএস ট্রাস্ট।
এরপর তিনি দুটি হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কাজ শুরু করেন।
“স্কোয়াশ” এখন ব্রিটিশ ব্যবসা পুরস্কারের জন্য দুবার সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত হয়েছে।
তিনি দ্বিতীয় একটি ভ্যান তৈরিরও পরিকল্পনা করছেন।
ম্যাকবিনের এই গল্প প্রমাণ করে, বয়স কোনো বাধা নয়।
ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে যেকোনো বয়সেই নতুন করে জীবন শুরু করা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান