ডিজিটাল ওয়ালেটে হানা: মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন প্রতারণা কৌশল
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে অনলাইন জালিয়াতির ঘটনাও বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরাধীরা এখন মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ডিজিটাল ওয়ালেটগুলোতে হানা দেওয়ার জন্য নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে।
এই ধরনের প্রতারণা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ব্যাপকতা লাভ করেছে এবং এর শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে।
নতুন এই প্রতারণা কৌশলে, অপরাধীরা ভুয়া অফার, আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন অথবা অপ্রত্যাশিত সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়। সাধারণত, ভুক্তভোগীকে অনলাইনে সস্তায় পণ্য কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয় অথবা সরকারি কোনো প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়।
এরপরে, তাদের কাছ থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য এবং ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) চাওয়া হয়। ওটিপি হলো একটি বিশেষ নিরাপত্তা কোড, যা ব্যাংক গ্রাহকদের মোবাইল নম্বরে পাঠায়, এবং এটি সাধারণত কোনো লেনদেন সম্পন্ন করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
প্রতারকরা প্রথমে ভুক্তভোগীকে একটি ভুয়া ওয়েবসাইটে পাঠায়, যেখানে তাদের কার্ডের বিস্তারিত তথ্য দিতে বলা হয়। এরপর, তারা ভুক্তভোগীর ব্যাংক থেকে আসা ওটিপি চায় এবং সেটি ব্যবহার করে ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোনে থাকা ডিজিটাল ওয়ালেট, যেমন – বিকাশ, নগদ অথবা রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপে তাদের কার্ডের তথ্য যুক্ত করে।
একবার কার্ডের নিয়ন্ত্রণ হাতে পেলে, তারা অনলাইনে কেনাকাটা করতে শুরু করে। অনেক সময়, তারা সঙ্গে সঙ্গেই এই টাকা খরচ করে না, বরং কয়েক মাস অপেক্ষা করে, যাতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সন্দেহ এড়ানো যায়।
এরপর তারা সাধারণত সুপারমার্কেট, অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো দোকানে ব্যবহারের জন্য গিফট কার্ড কেনে।
এই ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচতে হলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। অপরিচিত ওয়েবসাইট বা লিংকে ক্লিক করা উচিত নয়। কোনো অফার বা সুবিধার সত্যতা যাচাই করতে সরাসরি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য এবং ওটিপি-র মতো গোপন বিষয়গুলো কারো সাথে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সন্দেহজনক কিছু নজরে আসলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। এছাড়া, ব্যাংক এবং মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোরও তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে, যাতে গ্রাহকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক সরকারি সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান