আমার শহর ঢাকার যানজট এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রতিদিন সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে কিংবা বিকালে বাড়ি ফেরার সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকতে হয়।
গাড়ির হর্ন আর অসহ্য শব্দ দূষণের মাঝে যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। এমন ব্যস্তময় জীবনে প্রকৃতির সান্নিধ্য যেন এক অমূল্য আশীর্বাদ।
সম্প্রতি, এমন একটি অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক নিবন্ধ চোখে পড়ল। নিবন্ধটিতে লেখক মেলবোর্নের যানজটের মাঝে প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার একটি উপায় খুঁজে বের করেন।
ঢাকার যানজটের কথা মাথায় রেখে, চলুন, আমরাও প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার কিছু উপায় খুঁজে বের করি। ধরুন, আপনি গুলিস্তান থেকে মতিঝিলে অফিসে যাচ্ছেন।
পথে, হাইকোর্টের কাছাকাছি পৌঁছালে, রাস্তার পাশে ছায়াঘেরা একটি পুরনো বটগাছ দেখতে পান। তীব্র গরমের মধ্যে গাছের নিচে কিছুক্ষণ দাঁড়ালে মনটা জুড়িয়ে যায়, শরীরে শান্তি লাগে।
পাখির ডাক আর বাতাসের শীতল পরশ যেন শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি এনে দেয়।
এই ধরনের ছোট ছোট পরিবর্তন আমাদের জীবনে অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে। অফিসের কাজের ফাঁকে, দুপুরের খাবারের বিরতিতে, একটু হেঁটে কাছাকাছি কোনো পার্কে যাওয়া যেতে পারে।
ঢাকার রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন – এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে প্রকৃতির নীরবতা উপভোগ করা যায়। সেখানে ঘাস, ফুল আর গাছের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটানো মনকে শান্ত করতে পারে।
প্রকৃতির সান্নিধ্য শুধু মানসিক শান্তির জন্যই জরুরি নয়, এটি আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। গাছপালা আমাদের চারপাশের বাতাসকে বিশুদ্ধ করে এবং সূর্যের আলো ভিটামিন ডি তৈরিতে সাহায্য করে।
গবেষণা বলছে, সবুজ পরিবেশে সময় কাটানো আমাদের মানসিক চাপ কমাতে, মনোযোগ বাড়াতে এবং ঘুমের মান উন্নত করতে সহায়ক।
জাপানে দেখেছি, ব্যস্ত শহরের আনাচে-কানাচেও তারা খুব যত্ন করে ছোট ছোট বাগান তৈরি করে। এমনকি রেল স্টেশনের মতো ব্যস্ত স্থানেও সবুজ গাছপালা দিয়ে স্থানটিকে শান্ত ও আকর্ষণীয় করে তোলে।
আমাদের দেশেও এমন উদাহরণ আছে। অনেক বাড়িতে এখন ছাদে বাগান করার প্রবণতা দেখা যায়। রাস্তার পাশে, বিভিন্ন সরকারি ভবনের সামনেও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য গাছ লাগানো হয়।
আসুন, আমরা সবাই আমাদের চারপাশে সবুজকে আরও বেশি গুরুত্ব দেই। শহরের কোলাহল থেকে দূরে, প্রকৃতির কাছাকাছি কিছু সময় কাটানো আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর করতে পারে।
প্রতিদিনের ব্যস্ততার মাঝে, একটু সময় বের করে প্রকৃতির সাথে মিশে যান। দেখবেন, জীবনটা আরও সহজ আর আনন্দময় মনে হবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian