**ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নতুন স্টেডিয়াম: স্বপ্ন নাকি দেনার ফাঁদ?**
ফুটবল বিশ্বে, মাঠ শুধু একটি খেলার স্থান নয়, বরং একটি দলের পরিচয় এবং তার ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি। সম্প্রতি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাদের কিংবদন্তী ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের পাশে প্রায় ২ বিলিয়ন পাউন্ড (বর্তমান বাজার মূল্যে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি) ব্যয়ে ১ লক্ষ দর্শক ধারণক্ষমতার একটি অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
এই বিশাল বিনিয়োগ, একদিকে যেমন ক্লাবের আকর্ষণ বাড়াবে, অন্যদিকে সৃষ্টি করতে পারে বিশাল ঋণের বোঝা। প্রশ্ন উঠছে, এই পদক্ষেপ কি ইউনাইটেডের জন্য সুফল বয়ে আনবে, নাকি টটেনহামের মতো কঠিন পরিস্থিতির জন্ম দেবে?
ফুটবল ক্লাবগুলোর জন্য নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করা এখন একটি সাধারণ প্রবণতা। আর্সেনাল তাদের হাইbury স্টেডিয়াম ছেড়ে এমিরেটস স্টেডিয়ামে আসার পর দর্শক সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। একইভাবে, টটেনহামও তাদের নতুন স্টেডিয়ামে খেলার সুযোগ পাওয়ার পর মাঠের দর্শক সংখ্যা বাড়াতে সক্ষম হয়েছে।
তবে, নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করা মানেই যে সাফল্য আসবে, তা কিন্তু নয়। এর সঙ্গে আসে বিশাল অঙ্কের ঋণ পরিশোধের চাপ, যা অনেক সময় ক্লাবের খেলোয়াড় কেনার সামর্থ্য কমিয়ে দেয়।
আর্সেনালের উদাহরণ এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এমিরেটস স্টেডিয়াম তৈরির খরচ তাদের উপর এমন চাপ সৃষ্টি করেছিল যে, একসময় তারা খেলোয়াড় কিনতে হিমশিম খাচ্ছিল। এর ফলস্বরূপ, আর্সেনালকে দীর্ঘ সময় ধরে মাঠের খেলায় শীর্ষস্থান ধরে রাখতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।
টটেনহামও তাদের নতুন স্টেডিয়ামের জন্য বিশাল ঋণ নেওয়ার কারণে ২০১৮-১৯ মৌসুমে কোনো নতুন খেলোয়াড় কিনতে পারেনি।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ক্ষেত্রেও বিষয়টি বেশ উদ্বেগের। ক্লাবের বর্তমানে বছরে প্রায় ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার বেশি) সুদ পরিশোধ করতে হয়। নতুন স্টেডিয়াম তৈরি হলে এই সুদ পরিশোধের পরিমাণ দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে, দলের জন্য ভালো মানের খেলোয়াড় কেনা কঠিন হয়ে পড়বে, যা মাঠের খেলায় তাদের পারফর্মেন্সের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
অন্যদিকে, স্টেডিয়াম থেকে ক্লাবগুলির আয়ের সম্ভাবনাও অনেক। খেলা দেখার টিকিট বিক্রি, কর্পোরেট স্পনসরশিপ, ভেন্ডিং এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্লাবগুলো বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারে।
টটেনহাম তাদের নতুন স্টেডিয়াম থেকে গত বছর প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি) আয় করেছে, যার মধ্যে টিকিটের অর্থ ছিল প্রায় ১১৭ মিলিয়ন পাউন্ড এবং বাণিজ্যিক আয় ছিল প্রায় ২২৮ মিলিয়ন পাউন্ড।
তবে, আয়ের এই সম্ভাবনা সত্ত্বেও, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, আর্থিক সঙ্গতি রক্ষার জন্য এখন ক্লাবগুলোকে খেলোয়াড় বিক্রি এবং স্টেডিয়াম থেকে আয়ের উপর অনেক বেশি নির্ভর করতে হয়।
যদি তারা তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ভুল করে, তবে নতুন স্টেডিয়াম তাদের জন্য সাফল্যের পরিবর্তে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নতুন স্টেডিয়াম তৈরির পরিকল্পনা একদিকে যেমন তাদের সমর্থকদের জন্য আনন্দের খবর, তেমনি তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জও বটে।
ক্লাবটিকে একদিকে যেমন স্টেডিয়ামের নির্মাণ ব্যয় এবং ঋণের বোঝা সামলাতে হবে, তেমনই নিশ্চিত করতে হবে খেলোয়াড় কেনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থের যোগান।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান