শিরোনাম: অতিরিক্ত খাবার নষ্ট: ‘টু গুড টু গো’ অ্যাপের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে সমাধানের চেষ্টা
পৃথিবীর খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রায় ৩০ শতাংশ খাবার নষ্ট হয়, যা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের অন্যতম কারণ। এই বিশাল পরিমাণ খাদ্য অপচয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, নেসলে’র সাবেক কর্মী লুসি বাশ তৈরি করেছেন ‘টু গুড টু গো’ (Too Good To Go) নামের একটি অ্যাপ।
তাঁর এই উদ্যোগ বর্তমানে ১৯টি দেশে সক্রিয় রয়েছে এবং এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটিরও বেশি।
বাশ যখন এই অ্যাপ তৈরির কথা ভাবেন, তখন তাঁর প্রোগ্রামিং বা মার্কেটিং-এর কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না, এমনকি পর্যাপ্ত অর্থও ছিল না।
কিন্তু তাঁর মনে ছিল, খাবার নষ্ট হওয়ার এই দৃশ্যপট পরিবর্তনের অদম্য ইচ্ছা। বাশ উপলব্ধি করেছিলেন, খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার প্লেট পর্যন্ত, সর্বত্রই খাবার নষ্ট হয়।
তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল, বিভিন্ন বেকারি, রেস্টুরেন্ট এবং মুদি দোকান থেকে উদ্বৃত্ত খাবার সংগ্রহ করে তা সাশ্রয়ী মূল্যে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এর ফলে একদিকে যেমন ব্যবসার বাড়তি আয় হবে, তেমনি ভোক্তারাও কম দামে খাবার কিনতে পারবে এবং খাদ্য অপচয়ও কমবে।
২০১৬ সালে প্যারিসে বেড়ে ওঠা লুসি বাশ, নরওয়েতে বসবাস করার সময় হাতে কিছু লিফলেট ও সাইন আপ ফর্ম নিয়ে ব্যবসার মালিকদের সঙ্গে দেখা করেন।
তিনি তাঁদের বোঝাতে সক্ষম হন যে, অ্যাপটি ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁরা খুব সহজেই উদ্বৃত্ত খাবারগুলো সংরক্ষণ করতে পারবেন।
অ্যাপটি এখনো তৈরি না হলেও, বাশ ব্যবসায়ীদের কাছে এর গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি তাদের বলেন, “খাবার ফেলে দেওয়ার মতোই সহজ এই অ্যাপ ব্যবহার করা। শুধু ডাস্টবিনে ফেলার বদলে, খাবারগুলো কয়েকটি ব্যাগে ভাগ করে রাখতে হবে।”
পরবর্তীতে তিনি ডেনমার্কের কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে মিলিত হন, যাদের প্রোগ্রামিং জ্ঞান ছিল এবং তাঁরা বাশের এই ধারণাটিকে বাস্তবে রূপ দেন।
বর্তমানে ‘টু গুড টু গো’ উদ্বৃত্ত খাবার কেনাবেচার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম।
এই অ্যাপের মাধ্যমে, গ্রাহকরা কম দামে “সারপ্রাইজ ব্যাগ” (রহস্য ব্যাগ) -এর মতো খাবার কিনতে পারেন, যেখানে সাধারণত খাবারের মূল্যের এক-তৃতীয়াংশ দাম নেওয়া হয়।
শুধু তাই নয়, এই প্ল্যাটফর্মটি খাদ্য বিক্রেতাদের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি তৈরি করেছে, যা তাদের খাদ্য অপচয় কমাতে সাহায্য করে।
বাশের মতে, একটি সফল অ্যাপ তৈরির মূল চাবিকাঠি হলো দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা ভাবিনি।
আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রতিদিন আগের দিনের চেয়ে বেশি খাবার অপচয় রোধ করা।” বাশের এই জরুরি পদক্ষেপের কারণে, শুরুতে অনেক সময় প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দিলেও তাঁরা পিছিয়ে যাননি।
বাশ মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে দ্রুত কাজ করাই তাঁদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি ছিল।
বাশ প্রায়ই একটি বিষয় উল্লেখ করেন, যা হলো ‘নিষ্ক্রিয়তার ত্রিভুজ’। তাঁর মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার, কোম্পানি এবং ভোক্তারা একে অপরের জন্য অপেক্ষা করে।
বাশ বলেন, “আমাদের এই ধারণা পাল্টাতে হবে।
এই ত্রিভুজের যেখানেই আমরা থাকি না কেন, সেখান থেকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, আমরা যদি সফল হতে চাই, তবে আমাদের সবাইকে একই দিকে এগিয়ে যেতে হবে।”
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক