বসন্তকালে আপনার বাগানে ক্ষুধার্তদের জন্য কিছু সবজি চাষ করুন। বর্তমান বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অনেক মানুষ এখনো খাদ্য সংকটে ভোগে। বাংলাদেশেও দারিদ্র্যের কারণে অনেক পরিবারে পর্যাপ্ত খাবার জোটে না।
এই পরিস্থিতিতে, আপনার সামান্য প্রচেষ্টাই পারে ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। আপনি যদি এই বসন্তে ফল, সবজি অথবা প্রয়োজনীয় গাছের চারা রোপণের পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে কেন না কিছু অতিরিক্ত চারা লাগিয়ে আপনার এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য সরবরাহ করেন?
যদি আপনি আপনার বাড়ির আশেপাশে সবজি চাষ করেন, তাহলে অতিরিক্ত কিছু সবজি উৎপাদন করে স্থানীয় কোনো এতিমখানা, মসজিদ অথবা গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিতরণ করতে পারেন। এছাড়াও, আপনার এলাকার কোনো দরিদ্র প্রতিবেশী থাকলে, তাকেও এই সবজি দিতে পারেন।
আপনার এই সামান্য সাহায্য হয়তো একটি পরিবারের অনেক উপকারে আসবে। এই ধারণা থেকেই ১৯৯৫ সালে “প্ল্যান্ট এ রো ফর দ্য হাঙ্গরি” নামক একটি আন্তর্জাতিক কর্মসূচি শুরু হয়।
এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল, বাগান করেন এমন মানুষদের অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন করে অভাবী মানুষের মাঝে বিতরণ করতে উৎসাহিত করা। যুক্তরাষ্ট্রের “অ্যাংকারেজ ডেইলি নিউজ”-এর একজন বাগান বিষয়ক লেখক জেফ লোয়েনফেলস এই কর্মসূচির সূচনা করেন।
তিনি তার কলামের মাধ্যমে পাঠকদের অতিরিক্ত ফসল ফলানোর এবং তা বিতরণের জন্য উৎসাহিত করতেন। তার এই উদ্যোগের ফলস্বরূপ স্থানীয় পর্যায়ে খাদ্য বিতরণে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।
পরবর্তীতে তিনি “গার্ডেনকম ইন্টারন্যাশনাল”-এর সাথে যুক্ত হয়ে সারা বিশ্বের বাগান বিষয়ক লেখকদের এই উদ্যোগে শামিল করেন। এই কর্মসূচির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি খাদ্য উৎপাদন করা হয়েছে, যা প্রায় ৮০ মিলিয়নের বেশি মানুষের খাবারের যোগান দিয়েছে।
কর্মসূচিটির উদ্যোক্তারা বলছেন, এটি কোনো সরকারি সাহায্য বা জটিল পদ্ধতির আশ্রয় না নিয়ে, শুধুমাত্র মানুষের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। আপনি যদি এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে চান, তাহলে আপনার বাগানে এক সারিতে অথবা টবে কিছু অতিরিক্ত সবজি লাগাতে পারেন।
স্থান সংকুলান না হলে, অন্তত একটি অতিরিক্ত গাছ লাগিয়েও আপনি এই উদ্যোগে শামিল হতে পারেন। আপনার উৎপাদিত অতিরিক্ত সবজি স্থানীয় কোনো সাহায্য সংস্থায়, এতিমখানায় অথবা দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করতে পারেন।
আপনি চাইলে আপনার বন্ধু, প্রতিবেশী অথবা সহকর্মীদের সাথে মিলে এই ধরনের একটি কর্মসূচি শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অথবা অফিস, কমিউনিটি গার্ডেন, স্কুল অথবা কারাগারের বাগানেও এই কাজ করা যেতে পারে।
শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য আপনি “গার্ডেনকম” ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। এছাড়া, আপনার আশেপাশে কোথায় খাদ্য বিতরণের ব্যবস্থা আছে, তা জানার জন্য স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিতে পারেন।
অনেক মসজিদ, মন্দির, গীর্জা অথবা সামাজিক সংগঠন এই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। খাবার বিতরণের আগে, যে প্রতিষ্ঠানে আপনি খাবার দিতে চান, তাদের সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়ে নিন যে তারা তা গ্রহণ করতে পারবে।
অনেক সময় খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে পচনশীল খাবার সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নাও থাকতে পারে। এই ধরনের ছোট ছোট উদ্যোগের মাধ্যমেই আমরা আমাদের সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করতে পারি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস