ব্রিটিশ সঙ্গীতশিল্পী আর্লো পার্কস, যিনি তাঁর গভীর সংবেদনশীল গানের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেছেন, বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রসারে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন। তাঁর গানগুলি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি, যা শ্রোতাদের মধ্যে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করে।
শুধু গান গেয়েই ক্ষান্ত হননি, বরং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা সমাধানে সরাসরি কাজ করছেন তিনি।
২০২১ সালে প্রকাশিত তাঁর অ্যালবাম ‘কলাপসড ইন সানবিমস’-এর মাধ্যমে আর্লো পার্কস সংগীত জগতে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর গানগুলো যেন জীবনের ক্ষুদ্র মুহূর্তগুলোর প্রতিচ্ছবি, যা শ্রোতাদের হৃদয়ে নাড়া দেয়।
তাঁর গানের প্রধান বিষয়বস্তু হলো মানুষের ভেতরের অনুভূতির প্রকাশ এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা।
আর্লো পার্কসের গানের গভীরতা শুধুমাত্র সুরের মাধুর্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর বিষয়বস্তুও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘ব্ল্যাক ডগ’ গানটি তাঁর একজন বন্ধুর মানসিক অবসাদগ্রস্ততা নিয়ে লেখা হয়েছিল।
গানটি প্রকাশের পর তিনি উপলব্ধি করেন, অনেকেই হয়তো একই ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এরপর থেকেই তিনি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা সমাধানে কাজ করতে আরো বেশি আগ্রহী হন।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা তৈরিতে আর্লো পার্কস ‘ক্যাম্পেইন এগেইনস্ট লিভিং মিজারেবলি’ নামক একটি সংস্থার সাথে যুক্ত হন। এছাড়াও, তিনি ইউনিসেফের ইয়ুথ অ্যাডভাইজারি বোর্ডের সাথে কাজ করেছেন এবং বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে একটি কবিতা প্রকাশ করেন।
বর্তমানে তিনি ইউনিসেফের সর্বকনিষ্ঠ ইউকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর মতে, নিজের গানের জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি সিয়েরা লিওনে যান। সেখানে তিনি তরুণ সমাজকর্মীদের সাথে কাজ করেন এবং বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নেন।
সেখানকার শিশুদের স্যানিটারি প্যাড তৈরি এবং তাদের ছোট বোন ও বন্ধুদের তা শেখানোর দৃশ্যটি তাঁর হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আর্লো পার্কস মনে করেন, তিনি তাদের কথা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম।
আর্লো পার্কস তাঁর গানের মাধ্যমে মানুষের জন্য একটি আশ্রয়স্থল তৈরি করতে চান, যেখানে মানুষজন নিজেদের অনুভব করতে পারবে এবং ভালোবাসার কথা বলতে পারবে। তাঁর গানগুলো মানুষকে নিজের সম্পর্কে চিন্তা করতে এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করে।
আর্লো পার্কসের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের মানুষের কাছেও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমাদের দেশেও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা এখনো অনেক কম।
আর্লো পার্কসের কাজ আমাদের এই বিষয়ে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক