বিখ্যাত আইসল্যান্ডীয় শিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ, যিনি তাঁর ব্যতিক্রমী সঙ্গীতের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত, সেই বিয়োর্ক এবার পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সঙ্গীতের জগতে বিয়োর্কের সৃষ্টিশীলতা যেমন সীমাহীন, তেমনই বাস্তব জীবনেও তিনি পরিবেশ সুরক্ষার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
সম্প্রতি, প্যারিসের পমপিদু সেন্টারে তিনি পরিবেশ বিষয়ক একটি ম্যানিফেস্টো তৈরি করেছেন, যা শিল্প ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটিয়েছে।
বিয়োর্কের পরিবেশ সচেতনতার শুরুটা বেশ আগে থেকেই। তাঁর নিজের দেশ, আইসল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পরিবেশ রক্ষার প্রতি ছিল তাঁর গভীর আবেগ।
তাঁর মা ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা পরিবেশবিদ, যিনি ২০০২ সালে একটি অ্যালুমিনিয়াম কারখানা এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে ১৮ দিন অনশন করেছিলেন। মায়ের এই সংগ্রাম বিয়োর্কের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
প্যারিসের পমপিদু সেন্টারে বিয়োর্কের ম্যানিফেস্টোতে বিপন্ন প্রাণীদের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে চেয়েছেন।
তিনি হাভায়াইয়ান কাক, ওরাংওটাং এবং বিরল প্রজাতির ডলফিনের শব্দ ব্যবহার করেছেন। তাঁর এই কাজটি কেবল শিল্পকর্ম নয়, বরং পরিবেশ রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা।
বিয়োর্ক সব সময়ই এমন কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করতে চান, যেখানে পরিবর্তন আনা সম্ভব। তিনি মনে করেন, বিশাল লক্ষ্য নির্ধারণ না করে, ছোট ছোট কিন্তু কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
উদাহরণস্বরূপ, তিনি আইসল্যান্ডে বাণিজ্যিক স্যামন চাষের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছেন। এই খামারগুলোতে মাছের খাঁচায় ছিদ্র হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার স্যামন মাছ পালাতে শুরু করে।
এর ফলে স্থানীয় প্রজাতির সঙ্গে তাদের প্রজনন এবং রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিয়োর্ক এই সমস্যা সমাধানে স্থানীয় কৃষক এবং পরিবেশবিদদের একত্রিত করতে চেষ্টা করছেন।
পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে সচেতনতা বাড়াতে তিনি স্প্যানিশ শিল্পী রোজালিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে ‘ওরাল’ নামে একটি গান তৈরি করেছেন। এই গানের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ বাণিজ্যিক মৎস্য খামারের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোতে সহায়তা করছে।
বিয়োর্কের মতে, এটি একটি ম্যারাথন দৌড়ের মতো, যেখানে তাঁরা অবশ্যই জয়ী হবেন এবং অন্যদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।
বিয়োর্ক মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো মোকাবিলা করার জন্য আমাদের বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিকে তিনি একটি “আধুনিক ইউটোপিয়া” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তাঁর মতে, এমন কিছু লক্ষ্য তৈরি করা উচিত, যা অর্জন করা সম্ভব।
শুধু সঙ্গীত বা শিল্পচর্চা নয়, বিয়োর্ক সবসময়ই চেয়েছেন তাঁর কাজের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে। তিনি মনে করেন, একজন শিল্পী হিসেবে সমাজের প্রতি তাঁর কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে।
তিনি চান, তাঁর কাজ যেন মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য তাঁদের অনুপ্রাণিত করে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক