টেকসই পর্যটনের পথিকৃৎ: ট্রাভেল + লেজার-এর ২০২৫ সালের গ্লোবাল ভিশন অ্যাওয়ার্ড। বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে টেকসই পর্যটনের গুরুত্বও বাড়ছে।
পর্যটন এখন শুধু ঘুরে বেড়ানো বা অবকাশ যাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং পরিবেশের উপর এর প্রভাব বিবেচনা করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, ‘ট্রাভেল + লেজার’ প্রতি বছর তাদের ‘গ্লোবাল ভিশন অ্যাওয়ার্ডস’ প্রদান করে থাকে, যেখানে টেকসই ও পরিবেশ-বান্ধব পর্যটনে অবদান রাখা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং গন্তব্যগুলোকে সম্মানিত করা হয়।
এই অ্যাওয়ার্ডগুলো ভবিষ্যতের পর্যটনের পথ খুলে দেয়, যা একইসাথে পরিবেশের সুরক্ষাও নিশ্চিত করে। এবছরের অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীদের মধ্যে নির্বাচিত কয়েকটি উদ্যোগ আমাদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যা বাংলাদেশের পর্যটন খাতেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
১. লিটল সেন্ট সাইমনস আইল্যান্ড, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের এই দ্বীপটি পরিবেশ সংরক্ষণে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এখানে একটি পুরনো শিকার কুটির এবং পাঁচটি কুটির রয়েছে, যা পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে পরিচালিত হয়। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন এবং স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে কাজ করেন।
পর্যটকদের অংশগ্রহণে কচ্ছপ ও পাখির প্রজাতি রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করা হয়। এই দ্বীপের টেকসই পর্যটন মডেলটি আমাদের দেশের সুন্দরবন বা অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে, যেখানে পর্যটকদের অংশগ্রহণে পরিবেশ সংরক্ষণে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
২. লিডিং হোটেলস অফ দ্য ওয়ার্ল্ড-এর “সাসটেইনেবল লিডার্স” সংগ্রহ: এই হোটেল সংস্থাটি পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ নজর দিয়েছে।
তাদের ‘সাসটেইনেবল লিডার্স’ সংগ্রহে অন্তর্ভুক্ত হোটেলগুলো জল ব্যবহার কমানো, শক্তি ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি, স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি মনোযোগ এবং কর্মীদের জন্য ভালো সুযোগ তৈরি করার মতো কাজ করে থাকে। এই উদ্যোগগুলো প্রমাণ করে যে বিলাসবহুলতার সঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষার একটি দারুণ সমন্বয় ঘটানো যেতে পারে।
বাংলাদেশের হোটেল এবং রিসোর্টগুলোও তাদের ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে।
৩. মারি সেলবি বোটানিক্যাল গার্ডেন, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র: ফ্লোরিডার এই বোটানিক্যাল গার্ডেনটি টেকসই স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এখানে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের পাশাপাশি বৃষ্টির জল সংরক্ষণের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই ব্যবস্থাটি সফলভাবে কাজ করেছে।
এটি প্রমাণ করে যে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা এবং সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
৪. এইচবিডি প্রিন্সিপ, সাও টোমে ও প্রিন্সিপ: আফ্রিকার এই দ্বীপপুঞ্জটি জীববৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত।
এইচবিডি প্রিন্সিপ নামক একটি প্রতিষ্ঠান এখানে টেকসই পর্যটন এবং কৃষির মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতির উন্নতি করছে। তারা পরিবেশ-বান্ধব রিসোর্ট তৈরি করেছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
এই মডেলটি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য অনুসরণযোগ্য হতে পারে, যেখানে পর্যটন এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
এই অ্যাওয়ার্ডগুলো প্রমাণ করে যে টেকসই পর্যটন শুধু একটি ধারণা নয়, বরং এটি বাস্তবায়িত হতে পারে। পর্যটকদের সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের পর্যটন খাতকে আরও টেকসই করতে পারি।
টেকসই পর্যটনের ধারণা বর্তমানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভ্রমণের সময় পরিবেশের উপর আমাদের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী তৈরি করতে হলে, এখনই টেকসই পর্যটনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল + লেজার