মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যেকার সম্পর্কটি আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে রবার্টস একদিকে যেমন ট্রাম্পের কিছু সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে তাঁর ক্ষমতার প্রয়োগকে নিয়ন্ত্রণেও এনেছেন।
সম্প্রতি, অভিবাসন বিষয়ক একটি মামলায় ট্রাম্পের একজন বিচারকের প্রতি আক্রমণাত্মক মন্তব্যের পর রবার্টসের দেওয়া বক্তব্য এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
২০১৭ সাল থেকে, যখন ট্রাম্প প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, রবার্টস তাঁর এজেন্ডাকে বাস্তবায়নে সহায়তা করেছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছেন। গত বছর সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে ট্রাম্পকে ফৌজদারি অভিযোগ থেকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল, যা ছিল রবার্টসের লেখা।
অন্যদিকে, সরকারের বিভিন্ন নীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদনে সাড়া দিতে তিনি দ্বিধা প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি, ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন ফেডারেল বিচারক, জেমস বোয়াজবার্গকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। বোয়াজবার্গ ভেনেজুয়েলার একটি গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন অভিবাসীকে বিতাড়িত করার বিষয়ে তথ্য জানতে চাচ্ছিলেন।
ট্রাম্প তাঁর ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ পোস্টে বিচারক বোয়াজবার্গকে ‘বামপন্থী উন্মাদ’ এবং ‘বিপজ্জনক ব্যক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং তাঁর অভিশংসন দাবি করেন।
এই ঘটনার পরে, রবার্টস এক বিবৃতিতে বলেন, বিচারিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে অভিশংসন উপযুক্ত পদক্ষেপ নয়, এবং এই উদ্দেশ্যে আপিল প্রক্রিয়া বিদ্যমান।
রবার্টসের এই বক্তব্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচারকরা তাঁদের কাজ করেন স্বাধীনভাবে, এবং তাঁদের কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য থাকতে পারে না।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি স্টিফেন ব্রেইয়ার রবার্টসের এই বিবৃতিকে সময়োচিত বলে মন্তব্য করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে প্রধান বিচারপতি রবার্টস ও ট্রাম্পের মধ্যে এমন বিতর্ক নতুন নয়। ২০১৮ সালে, ট্রাম্প যখন একজন বিচারককে ‘ওবামা-বিচারক’ বলেছিলেন, তখনও রবার্টস এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, “আমাদের এখানে ওবামা বিচারক বা ট্রাম্প বিচারক নেই, বুশ বিচারক বা ক্লিনটন বিচারকও নেই। সকল বিচারকই তাঁদের সামনে আসা সকলের প্রতি ন্যায়বিচার করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।”
ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতি, যেমন মুসলিম দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার মতো সিদ্ধান্তে রবার্টস ট্রাম্পের পক্ষ নিয়েছিলেন। তবে, ২০২০ সালের আদমশুমারিতে নাগরিকত্বের প্রশ্ন যুক্ত করার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তির সঙ্গে তিনি ভিন্নমত পোষণ করেন।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে রবার্টস এবং তাঁর সহকর্মীদের জন্য আরও কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। এমন পরিস্থিতিতে জন রবার্টসের ভূমিকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, এবং তাঁর সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়েও জনমনে আগ্রহ বাড়বে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন