আশ্চর্য স্বাদের জগৎ: মুক্তোর মতো খাদ্যকণা
খাবার জগতে প্রায়ই নতুনত্ব আসে, কখনও বা পুরনো ধারণা নতুন রূপে ফিরে আসে।
বর্তমানে এমনই একটি আকর্ষণীয় খাদ্য উপকরণ হলো মুক্তোর মতো দেখতে খাদ্যকণা, যা মুখে দিলেই যেন এক ভিন্ন স্বাদের বিস্ফোরণ ঘটায়।
এই ধরনের খাদ্যকণাগুলো আকারে ছোট এবং বিভিন্ন উপাদানে তৈরি করা হয়। এটি শুধু খাদ্য পরিবেশনে ভিন্নতা আনতেই সাহায্য করে না, বরং খাবারের স্বাদ ও গঠনেও যোগ করে নতুন মাত্রা।
চলুন, এমনই কিছু মুক্তোর মতো খাদ্যকণা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
প্রকৃতির দান:
কিছু মুক্তোর মতো খাদ্যকণা আদিকাল থেকেই আমাদের খাদ্য তালিকায় বিদ্যমান।
যেমন মাছের ডিম বা ক্যাভিয়ার। বিভিন্ন প্রকার মাছের ডিম স্বাদে ভিন্নতা নিয়ে আসে এবং মুখের ভেতর ফোটানোর অনুভূতিও আলাদা হয়।
ক্যাভিয়ার সাধারণত ব্লাইনিস, টোস্ট বা আলু দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। উন্নত বিশ্বে এর কদর থাকলেও, বাংলাদেশে এর সহজলভ্যতা নেই বললেই চলে।
আরেকটি প্রাকৃতিক উপাদান হলো ফিঙ্গার লাইম বা আঙুলের মতো দেখতে লেবু। বাইরের দিকটা আঙুলের মতো হলেও এর ভেতরের অংশটা ছোট ছোট দানাদার, যা অনেকটা ক্যাভিয়ারের মতো।
এর স্বাদ অনেকটা লেবুর মতো, তবে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এটি অস্ট্র ও স্ক্যালোপের মতো সি-ফুডের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। বাংলাদেশে এই ফলটি সহজলভ্য না হলেও এর স্বাদ ও গঠন *শাতকরা* বা *জাম্বুরার* মতো ফলগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়।
বাবল টি এবং বোবা:
বাবল টি বা বোবা চা-এর প্রচলন শুরু হয় তাইওয়ানে, ১৯৮০-এর দশকে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বোবা সাধারণত টপিওকা স্টার্চ (কাসাভা গাছের মূল থেকে তৈরি) ও পানি দিয়ে তৈরি করা হয়।
অনেক সময় এতে বাদামি চিনি ব্যবহার করা হয়। এই ছোট ছোট বলগুলো চিবানো যায় এবং মিষ্টি স্বাদের হয়।
এটি ঠান্ডা চা-এর সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন কফি শপ ও দোকানে এটি পাওয়া যায়। বোবা টি-এর পাশাপাশি পপিং বোবা-ও বেশ জনপ্রিয়, যা মুখে দিলেই ফেটে যায়।
স্ফেরিফিকেশন:
স্ফেরিফিকেশন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে তরল খাবারকে ছোট ছোট জেলের মতো গোলকের রূপ দেওয়া হয়।
এই প্রক্রিয়ায় খাবারগুলো বাইরে থেকে শক্ত এবং ভেতরে নরম থাকে। এই ধরনের খাবারের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলো ব্যালসামিক ভিনেগার, যা বিভিন্ন সালাদ বা পিৎজাতে ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও, লেবুর রস, ট্রাফল এবং অন্যান্য ফলের রস দিয়েও এই ধরনের মুক্তোর মতো খাদ্যকণা তৈরি করা হয়। ইতালীয় শেফ ফেরান আদ্রিয়া ২০০০ সালের দিকে এই পদ্ধতি জনপ্রিয় করেন।
অন্যান্য উদাহরণ:
কিছু রেস্তোরাঁ তাদের নিজস্ব মেনুতে স্ফেরিফিকেশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন খাবার তৈরি করে।
যেমন – জলপাই থেকে তৈরি স্ফেরিফাইড অলিভ বা ছোট আকারের মোজারেলা চিজ। এছাড়াও, মিষ্টি খাবারের ক্ষেত্রে ক্যান্ডি বা চকলেট-এর ভেতরে এই ধরনের মুক্তোর মতো উপাদান ব্যবহার করা হয়।
উপসংহার:
মুক্তোর মতো খাদ্যকণা খাবারের জগতে নতুনত্ব এনেছে।
স্বাদ ও আকারের ভিন্নতার কারণে এটি খাদ্যপ্রেমীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি রান্নার একটি নতুন ধারা তৈরি করেছে, যেখানে খাদ্য পরিবেশনে সৃজনশীলতার সুযোগ রয়েছে।
ভবিষ্যতে এই ধরনের খাদ্যকণা আরও জনপ্রিয় হবে এবং বিভিন্ন ধরনের খাবারে এর ব্যবহার বাড়বে, এমনটাই ধারণা করা যায়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।