শারীরিক পরিবর্তনের এক ভিন্ন জগতে বিচরণকারী ফাকির মুসাফার, যিনি আধুনিক আদিম আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন। তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে নির্মিত হয়েছে নতুন একটি প্রামাণ্যচিত্র, যা এই মানুষটির বিতর্কিত জীবনকে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে।
‘এ বডি টু লিভ ইন’ (A Body to Live in) নামের এই চলচ্চিত্রে মুসাফারের ব্যক্তিগত জীবন, তাঁর শরীর পরিবর্তনের ধারণা এবং এর পেছনের দর্শন তুলে ধরা হয়েছে।
ফাকির মুসাফার, যিনি একসময় রোলান্ড লুমিস নামে পরিচিত ছিলেন, ১৯৪০ এর দশকে তোলা কিছু সাদা-কালো ছবিতে প্রথম নজরে আসেন। ছবিতে দেখা যায়, তিনি চামড়ার বেল্ট দিয়ে কোমর বেঁধে, গলায় দড়ি পেঁচিয়ে ছবি তুলছেন।
পরবর্তীতে তিনি ফাকির মুসাফার নাম ধারণ করেন এবং বডি মডিফিকেশন বা শরীর পরিবর্তনের ধারণাকে জনপ্রিয় করেন। তাঁর এই কাজের মূল বিষয় ছিল পুরুষত্ব ও নারীর সম্পর্কের টানাপোড়েন, আনন্দ ও কষ্টের অনুভূতি এবং আধ্যাত্মিকতা ও যৌনতার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা।
চলচ্চিত্র নির্মাতা অ্যাঞ্জেলো ম্যাডসেন ২০০৪ সালে মুসাফারের স্ত্রী, শিল্পী ক্লিও ডুবোসের সঙ্গে পরিচিত হন। ডুবোস এই ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
মুসাফারের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ম্যাডসেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ডুবোস ম্যাডসেনকে মুসাফারের বিশাল সংগ্রহ থেকে অজানা ছবি ও ভিডিও ব্যবহারের অনুমতি দেন, যেখানে ১০০ ঘণ্টারও বেশি দৃশ্য ধারণ করা ছিল।
অ্যানি স্প্রিংকল এবং রন আথির মতো খ্যাতিমান শিল্পীদের কন্ঠ ও মুসাফারের তোলা ছবি দিয়ে এই চলচ্চিত্রটি তৈরি করা হয়েছে।
‘এ বডি টু লিভ ইন’ চলচ্চিত্রটি ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে বডি মডিফিকেশন আন্দোলনের শুরু থেকে এর উত্থান, বিতর্ক এবং নৈতিক প্রশ্নগুলো তুলে ধরেছে। ছবিতে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছিদ্র করা এবং শরীরে আঘাত করার দৃশ্য রয়েছে, যা দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
মুসাফার বিশ্বাস করতেন, শরীরকে ইচ্ছামতো পরিবর্তন করার মাধ্যমে মানুষ মানসিক শান্তি ও আধ্যাত্মিকতার দিকে আকৃষ্ট হতে পারে। তিনি নগ্ন ‘ছিদ্রকরণ পার্টি’ করতেন এবং সার্কাসের কসরতের মতো অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন, যেখানে দর্শকদের সামনে পেরেক বিছানো খাটে শুয়ে থাকতেন এবং তাঁর উপর ওজন চাপানো হতো।
তবে, মুসাফারের এই কাজগুলি অনেকের কাছে বিতর্কের জন্ম দেয়। বিশেষ করে আদিবাসী আমেরিকান সম্প্রদায়ের নেতারা তাঁদের পবিত্র ঐতিহ্যের ভুল উপস্থাপনের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে “যুদ্ধ ঘোষণা” করেন।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে নিজের মতো করে ব্যবহারের অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।
নির্মাতা ম্যাডসেন জানান, মুসাফার সবসময় তাঁর কাজ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত থাকতেন এবং লোকেদের কাছে নিজেকে উন্মাদ প্রমাণ করতে চাইতেন না।
কারণ ১৯৬০-এর দশকে ভিন্ন কিছু করলেই মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হতো।
‘এ বডি টু লিভ ইন’ চলচ্চিত্রটি ভালোবাসার গল্প বলতে চায়, যেখানে মানুষ কীভাবে সম্পর্ক তৈরি করে, নিজেদের ভালো রাখার জন্য কী করে এবং সমাজের চোখে কীভাবে নিজেদের তুলে ধরে, সেই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান