গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ: গণহত্যার বিভীষিকা আর বেঁচে থাকার লড়াই গত ১৫ মাস ধরে গাজা উপত্যকার মানুষের জীবন যেন এক দুঃস্বপ্নের মতো।
ইসরায়েলি বিমান হামলার শব্দ, উদ্বাস্তু জীবনের কষ্ট, আর খাদ্য সংকটের মধ্যে দিন কাটছে তাদের। এখানকার মানুষের জীবনে এখন যেন কোনো বিশ্রাম নেই। প্রতিদিনই তারা মৃত্যুর কাছাকাছি যাচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে গাজার প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করেছে। অনেকের জীবন কেড়ে নিয়েছে এই যুদ্ধ।
গাজার একজন বাসিন্দা, যিনি আল জাজিরার কাছে তাঁর এই দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন, বলেছেন, জীবন বাঁচানোর জন্য তিনি নিজেকে মিথ্যা বলতে বাধ্য হয়েছেন।
২০০৮-০৯ সালের যুদ্ধের কথা মনে করে তিনি ভেবেছিলেন, এমন ভয়াবহতা হয়তো আর দেখতে হবে না। কিন্তু ২০১২, ২০১৪, ২০২১ এবং ২০২৩ সালেও গাজায় যুদ্ধ হয়েছে।
গত বছরের ৭ই অক্টোবর যখন ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো গাজার উপর নির্বিচারে বোমা বর্ষণ শুরু করে, তখন তিনি তাঁর মাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন, তাঁদের জীবনের হয়তো এটাই শেষ অধ্যায়।
এরপর যখন ইসরায়েল ১৭ই অক্টোবর বাপতিস্ট হাসপাতালে বোমা হামলা করে, বহু মানুষ নিহত হয়, তখনও তিনি নিজেকে মিথ্যা বলেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, বিশ্ববাসী গাজার পাশে দাঁড়াবে এবং ইসরায়েলের বোমা বর্ষণ বন্ধ হবে। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি।
বরং, ইসরায়েলি হামলা আরও তীব্র হয়। ডিসেম্বরে যখন তাঁদের বাস্তুচ্যুত হতে হলো, তখন তিনি ভেবেছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই হয়তো তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারবেন।
কিন্তু বাস্তবে, মে মাসে ফিরে এসে দেখেন, তাঁদের আবার উদ্বাস্তু হতে হয়েছে। এরপর সেপ্টেম্বরে সপ্তম বার যখন তিনি উদ্বাস্তু হলেন, তখন ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে। এরপর তিনি এবং তাঁর পরিবার রুটি, যা’তার এবং কিছু টুনার ক্যান খেয়ে দিন কাটিয়েছেন।
যুদ্ধবিরতির সময় তিনি ভেবেছিলেন, হয়তো এবার সব শেষ হবে। কিন্তু বাস্তবে, তা হয়নি। রমজান মাস শুরু হওয়ার পর ইসরায়েল সব ধরনের ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, যার ফলে সেখানে আবারও খাদ্য সংকট দেখা দেয়।
এরপর রমজানের রাতে যখন সবাই সেহরির জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, তখন ইসরায়েলের বোমা হামলায় ৪ শতাধিক মানুষ নিহত হয়, যাদের মধ্যে ১০০ জনের বেশি ছিল শিশু।
গাজার এই বাসিন্দা প্রশ্ন করেন, ইসরায়েল আর কত শিশুর জীবন নেবে? তাদের তথাকথিত ‘পূর্ণ বিজয়’ অর্জনের জন্য আর কত সময় লাগবে? তাঁদের আর কত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হবে?
তিনি জানেন না, এই বিভীষিকার শেষ কোথায়। তিনি বলেন, ইসরায়েল যেন সবসময়ই তাদের নিষ্ঠুরতার নতুন মাত্রা দেখাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শুধু নিন্দা জানায়, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয় না। তিনি চান, বিশ্ববাসী যেন তাঁদের এই কষ্টকে হালকাভাবে না নেয়।
তিনি চান, তাঁর একটি সুন্দর জীবন হোক, যেখানে বোমা, দুর্ভিক্ষ বা কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনার ভয় থাকবে না। তিনি আর মিথ্যা বলতে চান না, তিনি বাঁচতে চান।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা