বেলজিয়ামের একটি শহর, ল্যুভেনে, পুরনো বাড়িঘর ভেঙে ফেলার পরিবর্তে, সেখান থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র পুনরুদ্ধার করার এক অভিনব প্রকল্প শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল বর্জ্য হ্রাস করা, পরিবেশ রক্ষা করা এবং একইসাথে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগ কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, সেই বিষয়ে আলোকপাত করা হলো।
বর্তমানে, বাংলাদেশেও বর্জ্য একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে, নগরাঞ্চলে নির্মাণ ও ভাঙন কাজের ফলে প্রচুর পরিমাণে আবর্জনা তৈরি হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
ল্যুভেনের ‘আরবান মাইনিং’ প্রকল্পটি এক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পুরোনো বাড়িঘরের ইট, কাঠ, লোহা, এমনকি দরজা-জানালার মতো জিনিসগুলোও পুনর্ব্যবহার করা হচ্ছে।
ল্যুভেনের ডেপুটি মেয়র থমাস ভ্যান ওপেনস এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা। তার মতে, “শহরে যা প্রবেশ করে, তা যেন শহরের ভেতরেই থাকে।”
অর্থাৎ, শহরের সম্পদ বাইরে যেতে না দিয়ে, তা পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করা। এই ধারণা থেকেই মূলত ‘আরবান মাইনিং’-এর সূচনা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সরকার, অলাভজনক সংস্থা এবং বাসিন্দারা একসঙ্গে কাজ করছে। যেমন, ‘ম্যাটেরিয়ালেনব্যাঙ্ক’ নামের একটি সংস্থা পুরোনো নির্মাণ সামগ্রী সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে।
এছাড়াও, ‘ওনেন এন ওয়ার্কেন’ নামের একটি সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে বেকার ও অভিবাসীদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। এই কর্মীরা পুরোনো জিনিসপত্র পরিষ্কার করা, মেরামত করা এবং নতুন করে ব্যবহারের উপযোগী করার কাজ করেন।
শুধু তাই নয়, ল্যুভেনের এই প্রকল্পটি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতাও তৈরি করছে। এখানে, স্থানীয় কারিগর ও উদ্যোক্তারা পুরোনো উপকরণ ব্যবহার করে নতুন জিনিস তৈরি করছেন।
যেমন, একজন তরুণ উদ্যোক্তা পুরনো কাঠ দিয়ে ক্লাইম্বিং ওয়াল তৈরি করছেন। এছাড়াও, স্থানীয় একটি কেন্দ্রে পুরনো কাপড় মেরামত করা হয় এবং স্বল্প মূল্যে বিভিন্ন জিনিস কেনা ও বেচা হয়।
ল্যুভেনের এই প্রকল্পের সাফল্যের পেছনে রয়েছে একটি সুসংহত পরিকল্পনা। শহরের কর্তৃপক্ষ পুরোনো বাড়িঘরগুলো ভেঙে ফেলার আগে, সেখান থেকে কী কী জিনিস পুনরুদ্ধার করা সম্ভব, তা খতিয়ে দেখে।
এছাড়া, কু লিউভেন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটি হসপিটালস ল্যুভেনের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নতুন নির্মাণ ও সংস্কারের কাজে পুনর্ব্যবহৃত জিনিস ব্যবহারের অঙ্গীকার করেছে।
অবশ্য, এই ধরনের প্রকল্প সফল করতে হলে শুধু সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
প্রত্যেকেরই পুরনো জিনিস ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে, তা পুনর্ব্যবহারের কথা ভাবতে হবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ল্যুভেনের এই আরবান মাইনিং প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশেও নির্মাণ সামগ্রীর পুনর্ব্যবহারের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
এই প্রকল্পের ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা যেতে পারে।
একইসঙ্গে, এটি একদিকে যেমন পরিবেশ সুরক্ষায় সাহায্য করবে, তেমনই অন্যদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও সহায়তা করবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান