সুতার জাদুকরী জগৎ: অবসরে সৃজনশীলতার ছোঁয়া
জীবন এখন যেন এক দৌড়। কাজের চাপ, ব্যস্ততা আর নানা উদ্বেগে মনকে শান্ত রাখা কঠিন হয়ে পরে। এই ব্যস্ত সময়ে একটু শান্তির পরশ বুলিয়ে দিতে পারে একটি শখ – আর সেটি হলো হাতের কাজ, বিশেষ করে সূঁচ আর সুতোর বুনন।
পশ্চিমা বিশ্বে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে, এবং এখন এটি বাংলাদেশেও বেশ পরিচিতি লাভ করছে।
এই কাজটি আসলে কি? সোজা কথায়, এটি হলো দুটি কাঠি ও সুতোর সাহায্যে কাপড় বোনার প্রক্রিয়া। যারা বুনন ভালোবাসেন, তারা এটি উপভোগ করেন, কারণ এতে মন শান্ত হয় এবং একই সাথে চমৎকার কিছু তৈরি করা যায়।
শুরু করার জন্য আপনার কি কি দরকার?
প্রথমেই প্রয়োজন: সুতা। বাজারে নানা ধরনের সুতা পাওয়া যায় – উল, কটন বা লিনেন-এর মতো প্রাকৃতিক তন্তু থেকে শুরু করে সিনথেটিক সুতাও রয়েছে।
শুরুতে, মোটা ও নরম উল-এর সুতা দিয়ে কাজ শুরু করা ভালো। এতে বোনার সময় হাতের চাপ কম পড়ে এবং ভুল হলে তা সহজে ঠিক করা যায়।
সুতার প্যাকেটের গায়ে সাধারণত কাঠি বা সুইয়ের মাপ লেখা থাকে, তাই নতুনদের জন্য ৪ মিমি মাপের কাঠি ব্যবহার করা সুবিধাজনক।
এরপর দরকার: বুনন কাঠি বা সুঁই। সাধারণত দুটি সোজা কাঠি দিয়ে বুনন শুরু করা হয়, তবে বৃত্তাকার কাঠিও বেশ জনপ্রিয়।
বৃত্তাকার কাঠির সুবিধা হলো, এটির সাহায্যে টুপি, স্কার্ফ বা মোজার মতো গোলাকার জিনিস বোনা যায়। বাঁশ বা কাঠের কাঠি ব্যবহার করলে সুতা পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
এছাড়াও প্রয়োজন:
কোথায় পাবেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র? ঢাকার নিউ মার্কেট, গাউসিয়া অথবা অনলাইন শপিং-এর মাধ্যমে এইসব সরঞ্জাম সহজেই সংগ্রহ করা যায়।
কিভাবে শুরু করবেন?
শুরুতে ছোট আকারের কিছু তৈরি করা ভালো। যেমন, একটি স্কার্ফ বা হাতের মোজা। ইউটিউবে বুনন শেখার অসংখ্য ভিডিও রয়েছে।
“ভেরি পিঙ্ক নিটস” (Very Pink Knits) অথবা “নিম্বল নিডলস” (Nimble Needles)-এর মতো চ্যানেলগুলো নতুনদের জন্য বেশ উপযোগী। বুননের সময় ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক।
তবে ধৈর্য ধরে চেষ্টা করলে ধীরে ধীরে দক্ষতা বাড়ে।
বুননের উপকারিতা কি?
বুনন একটি চমৎকার শখ, যা মানসিক শান্তির পাশাপাশি সৃজনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। যারা বুনন করেন, তাদের মনোযোগ বাড়ে এবং এটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।
যারা দীর্ঘদিন ধরে অফিসের কাজের চাপে মানসিক অবসাদে ভুগছেন, তারা এই শখটির মাধ্যমে মানসিক শান্তির ঠিকানা খুঁজে পেতে পারেন।
বাংলাদেশে বুননের ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বুনন। এটি শুধু একটি শখই নয়, বরং এটি একটি শিল্পও বটে।
যারা ফ্যাশন ভালোবাসেন, তারা নিজের পোশাক তৈরি করতে পারেন। এছাড়াও, উপহার হিসেবে হাতে বোনা কোনো জিনিস দেওয়ার মজাই আলাদা।
সুতরাং, অবসরের এই সময়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে এবং মনের শান্তির জন্য বুনন শুরু করতে পারেন।
তথ্য সূত্র: The Guardian