খেলাধুলার জগৎ সবসময়ই আবেগ আর উত্তেজনায় ভরপুর। ১৯৮৯ সালের এপ্রিল মাস, ইংল্যান্ডের ফুটবল তখনও শোকের ছায়া থেকে পুরোপুরি মুক্তি পায়নি। হিলসবোরো ট্র্যাজেডির ক্ষত তখনও গভীর।
এমন একটি সময়ে, ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো ইংল্যান্ড বনাম আলবেনিয়া ম্যাচ। আর এই ম্যাচেই জন্ম হয় এক নতুন তারকার, যাঁর নাম পল গ্যাসকোয়েন।
গ্যাসকোয়েন মাঠে নামার আগে, ম্যাচটি ছিল কিছুটা অন্যরকম। হিলসবোরো ট্র্যাজেডির কারণে খেলোয়াড়দের মানসিক অবস্থা ছিল খুবই কঠিন। শোকের আবহাওয়ার মধ্যেই খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সেই ম্যাচে ইংল্যান্ড ৫-০ গোলে জয়লাভ করে, এবং এই জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন গ্যারি লিনেকার ও পিটার বিয়ার্ডসলি। কিন্তু ম্যাচের আসল আকর্ষণ ছিলেন পল গ্যাসকোয়েন।
ম্যাচের ৬৬তম মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন ২১ বছর বয়সী গ্যাসকোয়েন। মাঠে নেমেই তিনি বুঝিয়ে দেন, কেন তাঁকে ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তাঁর ক্ষিপ্রতা, বল কন্ট্রোল এবং আক্রমণভাগের দক্ষতা দর্শকদের মুগ্ধ করে। আলবেনিয়ার রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের বোকা বানিয়ে তিনি আক্রমণ তৈরি করতে থাকেন। ম্যাচের ৭২ মিনিটে ক্রিস ওয়াডলের গোলে অ্যাসিস্ট করেন তিনি।
এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ম্যাচের ৮৯ মিনিটে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আলবেনিয়ার ডি-বক্সের ভেতরে ঢুকে, প্রায় ১২ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ের দারুণ শটে গোল করেন গ্যাসকোয়েন। তাঁর এই গোল শুধু তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম গোল ছিল না, বরং ইংরেজ ফুটবলপ্রেমীদের জন্য ছিল এক নতুন দিগন্তের সূচনা।
কমেন্ট্রेटर জন মটসন এই গোলটিকে ‘চমৎকার প্রতিভা’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
গ্যাসকোয়েনের এই গোল এবং তাঁর খেলার ধরন, ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে নতুন উন্মাদনা সৃষ্টি করে। ববি রবসন, যিনি সেই সময় ইংল্যান্ড দলের ম্যানেজার ছিলেন, গ্যাসকোয়েনকে নিয়ে বলেছিলেন, “গ্যাসকোয়েন একজন বিরল এবং অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী।
রবসন আরও বলেছিলেন, “দলগত খেলার গুরুত্ব গ্যাসকোয়েনকে বুঝতে হবে।
পরবর্তী সময়ে, ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে গ্যাসকোয়েন তাঁর প্রতিভার প্রমাণ দেন। তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সের কারণে ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে পৌঁছায়। হিলসবোরো ট্র্যাজেডির শোক কাটিয়ে ওঠা এবং ফুটবলকে নতুন করে ভালোবাসতে শেখানোর পেছনে গ্যাসকোয়েনের এই গোলটি ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান