বিখ্যাত সুরকার স্টিভ রাইখ: সঙ্গীতের জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র
সঙ্গীতের জগতে “ন্যূনতমতাবাদ” (minimalism) শব্দটির সঙ্গে পরিচিত অনেকেই। এই ধারার সঙ্গীতের অন্যতম অগ্রদূত হলেন স্টিভ রাইখ। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর সঙ্গীত জীবন, বিভিন্ন প্রভাবশালী শিল্পী এবং বর্তমান সময়ের সঙ্গীত জগৎ নিয়ে কথা বলেছেন।
স্টিফ রাইখ তাঁর সঙ্গীতের শুরু সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, “ন্যূনতমতাবাদ” শব্দটি মূলত সঙ্গীত সমালোচক মাইকেল নাইম্যানের তৈরি করা। তাঁর মতে, এই ধরনের সঙ্গীতে সুরের পরিবর্তনগুলো খুবই সূক্ষ্মভাবে ঘটে, যা শ্রোতাদের জন্য এক ভিন্ন ধরনের শ্রবণ অভিজ্ঞতা তৈরি করে। তাঁর বিখ্যাত কাজগুলোর মধ্যে ‘ইটস গনা রেইন’ (It’s Gonna Rain) এবং ‘পিয়ানো ফেজ’ (Piano Phase) উল্লেখযোগ্য।
ডেভিড বোয়ির সঙ্গে তাঁর কাজের প্রভাব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রাইখ জানান, ১৯৭৮ সালে নিউইয়র্কের বটম লাইনে ‘মিউজিক ফর আঠারো জন সঙ্গীতশিল্পী’ পরিবেশন করার পর বোয়ির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। বোয়ি তাঁর কাজ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং রাইখের সঙ্গে তাঁর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের বিনিময় হয়েছিল। এমনকি, বোয়ির ‘লাভ ইজ লস্ট’ (Love is Lost) গানের একটি রিমিক্সে রাইখের ‘ক্ল্যাপিং মিউজিক’-এর অংশ ব্যবহার করা হয়েছে, যা রাইখের কাছে বেশ আকর্ষণীয় লেগেছিল।
নিজের সঙ্গীত জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি, রাইখ তাঁর শিক্ষক এবং সহকর্মীদের সম্পর্কেও কথা বলেছেন। তিনি জানান, মিলস কলেজে ইতালীয় সুরকার লুসিয়ানো বেরিওর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় এবং তিনি তাঁর কাছে সঙ্গীতের অনেক কিছুই শিখেছেন। পরবর্তীতে, তিনি এবং ফিলিপ গ্লাস একসঙ্গে কাজ করেছেন, যা তাঁদের সঙ্গীত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।
সমসাময়িক সঙ্গীত প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাইখ জানান, তিনি রেডিওহেড ব্যান্ডের সঙ্গীতের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত। রেডিওহেডের জনি গ্রিনউডের সঙ্গে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ‘রেডিও রিরাইট’ (Radio Rewrite) তৈরি করেন, যা দুটি রেডিওহেড গানের উপর ভিত্তি করে রচিত।
দীর্ঘ সময় ধরে গান শোনার বর্তমান প্রবণতা নিয়ে তিনি বলেন, আজকালকার দিনে গানের দৈর্ঘ্য ছোট হওয়ার কারণে শ্রোতাদের মধ্যে দীর্ঘ সময়ের গান শোনার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। তাঁর মতে, কিছু গান ছোট হওয়াই ভালো, কিন্তু ‘মিউজিক ফর আঠারো জন সঙ্গীতশিল্পী’র মতো কিছু কাজ প্রায় ৫৫ মিনিটের হওয়া উচিত।
রাজনীতি এবং শিল্পের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, রাইখ বলেন, “আমরা সবাই চাই শিল্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির দিক পরিবর্তন করুক। কিন্তু, বাস্তবতা হলো, তা পারে না।” তিনি উদাহরণস্বরূপ, পাবলো পিকাসোর ‘গুয়ের্নিকা’র কথা উল্লেখ করেন, যা স্পেনের গুয়ের্নিকা শহরের বোমা হামলার প্রেক্ষাপটে তৈরি করা হয়েছিল।
নিজের সঙ্গীতের আধ্যাত্মিক দিক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রাইখ জানান, তাঁর কাজের পেছনে রয়েছে তাঁর ইহুদি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গভীর প্রভাব। তিনি বলেন, “তেহিলিম” (Tehillim) তাঁর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল এবং এর মাধ্যমে তিনি সঙ্গীতের নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করতে পেরেছেন।
সবশেষে, তিনি তাঁর সঙ্গীতের মূল সুর সম্পর্কে বলেন, বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতের মধ্যে একটি সাধারণ বিষয় হলো ‘হারমোনিক সেন্টার’ (harmonic center)। তাঁর মতে, এই বিষয়টি সঙ্গীতের ধারাগুলোকে একত্রিত করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান