রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কতদূর বিস্তৃত? এই প্রশ্নটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে যেখানে সরকার প্রধানের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে রাজনৈতিক বিতর্কের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমতা, তার প্রয়োগের ক্ষেত্র, এবং সেই ক্ষমতার ওপর আরোপিত সীমাবদ্ধতাগুলি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
কোনো দেশে রাষ্ট্রপতি কেবল আনুষ্ঠানিক প্রধান, আবার কোনো দেশে তিনি নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিকে যদি উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়, তবে দেখা যায় তার হাতে রয়েছে বিশাল ক্ষমতা। তিনি নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারেন, যা কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই অনেক ক্ষেত্রে আইন হিসেবে গণ্য হতে পারে। তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিতে পারেন, যা বিচার বিভাগের ওপর তার প্রভাব বিস্তার করে।
পররাষ্ট্রনীতিতেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে, যেমন আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষর করা অথবা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কংগ্রেস, সুপ্রিম কোর্ট এবং জনগণের ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন না।
কংগ্রেস তাকে অভিশংসন করতে পারে, সুপ্রিম কোর্ট তার কোনো পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারে, এবং জনগণের ভোটের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুতও করা যেতে পারে।
ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থাও একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এখানে রাষ্ট্রপতি একটি শক্তিশালী পদ, যিনি দেশের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতির প্রধান নির্ধারক। তার হাতে প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ ও বরখাস্ত করার ক্ষমতা থাকে।
তবে, ফরাসি সংবিধানেও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ওপর কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে, যা নিশ্চিত করে যে কোনো ব্যক্তি যেন একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী না হন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি এই বিষয়গুলি বিবেচনা করা হয়, তাহলে দেখা যায় যে রাষ্ট্রপতি একটি সাংবিধানিক পদ, যিনি রাষ্ট্রের প্রধান। তবে, নির্বাহী ক্ষমতা মূলত প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত।
রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেন, যেমন প্রধান বিচারপতি বা নির্বাচন কমিশনার। এছাড়া, জাতীয় সংসদে কোনো বিল পাস হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সম্মতির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে অনেক সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়, বিশেষ করে যখন সরকার গঠনের মতো বিষয় আসে।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা এবং তার সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এটি নিশ্চিত করে যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ না হয়।
ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করতে এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে এই ধরনের আলোচনা অপরিহার্য। জনগণের সচেতনতা এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নতি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা