মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে মার্কো রুবিওর ভূমিকা নিয়ে বর্তমানে আলোচনা চলছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী স্টিভ উইটকফের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে তার (রুবিও) কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বিভিন্ন সূত্রে খবর, ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে পররাষ্ট্র বিষয়ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে উইটকফকে বেশি সক্রিয় দেখা যাচ্ছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে ব্যর্থ হওয়ার পর রুবিও এই গুরুত্বপূর্ণ পদটি পেতে চেষ্টা করেছিলেন। তিনি জানতেন, ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করা সহজ হবে না।
এমনকি, ট্রাম্প যে কোনো সময় টুইট করে শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করতে পারেন, সে বিষয়েও তিনি অবগত ছিলেন।
কিন্তু পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর রুবিও সম্ভবত এমনটা আশা করেননি। জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করা উইটকফ কার্যত বিশ্ব মঞ্চে রুবিওর চেয়ে বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন।
ইসরায়েলে জিম্মিদের মুক্তি, গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং রাশিয়ার কাছ থেকে মার্কিন নাগরিক মার্ক ফোগেলের প্রত্যাবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে উইটকফের সক্রিয়তা ছিল উল্লেখযোগ্য। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনাতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
এমনকি, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসার জন্য তিনি মস্কোতেও গিয়েছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উইটকফের এই সক্রিয়তা রুবিওর জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কারণ, ঐতিহ্যগতভাবে পররাষ্ট্র সচিবের যে ধরনের ভূমিকা থাকে, এক্ষেত্রে উইটকফের কারণে রুবিওর সেই সুযোগ কমে আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিকের মতে, “উইটকফ যেন বিশ্বজুড়ে পররাষ্ট্র সচিবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
অন্যদিকে, রুবিও নিয়মিতভাবে মধ্য আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং কানাডায় সফর করছেন। অভিবাসন, গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জি-৭ অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করছেন তিনি।
তবে হোয়াইট হাউসের কিছু পদক্ষেপে তার অস্বস্তি প্রকাশ পেয়েছে বলেও শোনা যায়।
বর্তমানে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরেও রুবিওর ভূমিকা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেক কূটনীতিক পদত্যাগ করেছেন।
সরকারি নিয়োগ বন্ধ থাকায় নতুন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণও স্থগিত করা হয়েছে। তবে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রুবিও কিছু ক্ষেত্রে তাদের জন্য কাজ করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠদের প্রভাব নতুন নয়। অতীতেও এমন নজির দেখা গেছে।
তবে, পররাষ্ট্র বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোতে রুবিওর চেয়ে উইটকফের প্রভাব বেশি হওয়ায় অনেকেই বিস্মিত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রুবিও হয়তো এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে, ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনাকে সামনে রেখে তিনি হয়তো নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চাইছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন