প্রেমের সংসারে ঈর্ষা: স্বামীর প্রাক্তন সহকর্মীর প্রতি এক নারীর মানসিক টানাপোড়েন
বিয়ে মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ভালোবাসার দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সুখে-দুঃখে পাশে থাকেন। কিন্তু মাঝে মাঝে সামান্য বিষয়ও সংসারে অশান্তি ডেকে আনে।
তেমনই এক ঘটনার কথা জানা যায়, যেখানে ৫০ বছর বয়সী এক নারী তাঁর স্বামীর প্রাক্তন সহকর্মীর প্রতি তীব্র ঈর্ষাবোধ করেন। তাঁদের দাম্পত্য জীবন ছিল সুখে পরিপূর্ণ, ভালোবাসায় ভরপুর। স্বামী ছিলেন খুবই ভালো মানুষ, যিনি সবসময় স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল ছিলেন।
কিন্তু কয়েক বছর আগে স্বামীর কর্মক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তনের কারণে তাঁদের জীবনে এই ঈর্ষার ছায়া নেমে আসে।
স্বামীর কর্মজীবনের সূত্রে পরিচয় হওয়া কয়েকজন তরুণ সহকর্মীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। এর মধ্যে “অ্যান” নামের এক নারী ছিলেন, যাঁর প্রতি স্ত্রীর মনে তীব্র ঈর্ষা জন্ম নেয়।
স্বামীর মুখে “অ্যান”-এর প্রশংসা, যেমন – “অ্যান-এর মতো সবজি রান্না করো”, ইত্যাদি কথায় তিনি হতাশ হতেন। তিনি নিজেকে “অ্যান”-এর তুলনায় দুর্বল মনে করতেন, কারণ “অ্যান” ছিলেন সুন্দরী, আকর্ষণীয় এবং হাসিখুশি স্বভাবের।
এই বিষয়টি নিয়ে তাঁদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো।
অবশেষে, স্বামীর চাকরি পরিবর্তনের ফলে “অ্যান”-এর সঙ্গে তাঁর দেখা হওয়ার সুযোগ কমে যায়। স্বামীও স্ত্রীর মানসিক অবস্থা বুঝতে পারেন এবং তাঁর সঙ্গে দেখা করা বন্ধ করে দেন।
কিন্তু প্রাক্তন সহকর্মীদের সঙ্গে স্বামীর যোগাযোগ তখনও ছিল। কোনো অনুষ্ঠানে তাঁদের দেখা হলে, স্বামী সেই কথা স্ত্রীকে জানালেও, তাঁর মনে ঈর্ষা জাগতো।
তিনি সবসময় ভয় পেতেন, তাঁর স্বামী হয়তো আবার “অ্যান”-এর প্রেমে পড়বেন এবং তাঁকে ছেড়ে চলে যাবেন।
এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ চেয়েছেন। বিশেষজ্ঞের মতে, এই ধরনের তীব্র অনুভূতির কারণ হলো গভীর মানসিক সমস্যা।
সম্ভবত, নারীর আত্ম-সম্মানে ঘাটতি রয়েছে এবং অতীতের কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। তাঁর মনে হতে পারে, তিনি ভালোবাসায় বঞ্চিত হচ্ছেন বা একাকী হয়ে পড়ছেন।
বিশেষজ্ঞ আরও মনে করেন, এই ধরনের পরিস্থিতিতে নিজের ভেতরের কথাগুলো শোনা এবং নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী, এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। নিজের ভেতরের সমালোচকের কণ্ঠকে চিহ্নিত করতে হবে এবং নিজের প্রতি আরও বেশি সহানুভূতিশীল হতে হবে।
অতীতের কোনো দুঃখজনক ঘটনা যা বর্তমানের ঈর্ষার কারণ, তা খুঁজে বের করতে হবে। স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে এবং তাঁদের ভালোবাসার সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে হবে।
আমাদের সমাজে দাম্পত্য কলহ একটি পরিচিত সমস্যা। অনেক সময় সামান্য ভুল বোঝাবুঝি থেকেও সম্পর্কের অবনতি হতে পারে।
তাই, এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় ধৈর্য ও সহানুভূতির সঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে, পরিবারের বয়স্ক সদস্য বা কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
এছাড়া, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ফোরামেও সাহায্য পাওয়া যেতে পারে।
মনে রাখতে হবে, ভালোবাসার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সম্মান অত্যন্ত জরুরি। ঈর্ষা, সন্দেহ বা ঘৃণা ভালোবাসার পথে বাধা সৃষ্টি করে।
তাই, আসুন, আমরা সবাই আমাদের সম্পর্কগুলোকে আরও সুন্দর ও ভালোবাসাপূর্ণ করে তুলি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান