ব্রিটিশ শেফ গ্রাহাম হর্নিগোল্ডের জীবন এক অপ্রত্যাশিত মোড় নেয়, যখন ৪৫ বছর পর তাঁর মায়ের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। মায়ের দাবি ছিল তিনি ধনী এবং ব্রুনাইয়ের সুলতানের অবৈধ সন্তান।
শুরুতে সবকিছু সুন্দরভাবে চললেও, ধীরে ধীরে গ্রাহাম বুঝতে পারেন তিনি এক ভয়ংকর প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এই ঘটনার সাক্ষী হিসেবে সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে নেটফ্লিক্সের প্রামাণ্যচিত্র ‘কন মাম’।
১৯৭৪ সালে জার্মানির একটি সেনাঘাঁটিতে জন্ম হয় গ্রাহামের। শৈশবে মায়ের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত গ্রাহামের বেড়ে ওঠা ছিল কষ্টের। মায়ের অভাব তাকে সবসময় তাড়িয়ে বেড়িয়েছে।
মায়ের পরিচয় জানার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল তার মনে। ঘটনাক্রমে, ২০২০ সালের শুরুতে, গ্রাহামের জীবনে এক নারীর আগমন ঘটে, যিনি নিজেকে তাঁর মা হিসেবে পরিচয় দেন।
এই নারী আর কেউ নন, তিনি হলেন ডিওন। ডিওন জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন এবং মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় তাঁর ব্যবসা রয়েছে। এমনকি তিনি ব্রুনাইয়ের প্রাক্তন সুলতানের অবৈধ সন্তান বলেও দাবি করেন।
শুরুতে গ্রাহাম মায়ের প্রতি আকৃষ্ট হন। ডিওনের ভালোবাসাপূর্ণ আচরণে তিনি মুগ্ধ হন। ডিওন গ্রাহামকে লন্ডনে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং সেখানে বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে শুরু করেন।
তিনি গ্রাহাম এবং তাঁর সঙ্গিনী হেদার কানিয়াককে দামি উপহার দেন। এমনকি গ্রাহামের জন্য একটি রেঞ্জ রোভার এবং হেদারের জন্য একটি বিএমডব্লিউ গাড়িও কেনেন।
কিন্তু এই মধুর সম্পর্কের আড়ালে ছিল এক ভয়ংকর প্রতারণার জাল। ডিওন জানান, তিনি মস্তিষ্কের টিউমার এবং অস্থিমজ্জার ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং তাঁর হাতে বেশি সময় নেই।
তাই তিনি গ্রাহামের সঙ্গে তাঁর শেষ দিনগুলো কাটাতে চান। এরপর তিনি গ্রাহামকে সুইজারল্যান্ডে নিয়ে যান, যেখানে তারা একটি সুইস ব্যাংক হিসাব খোলার চেষ্টা করেন। ডিওন গ্রাহামকে তাঁর বিশাল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী বানানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
সুইজারল্যান্ডে থাকাকালীন ডিওন অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে শুরু করেন। তিনি সেখানকার একটি হোটেলে ওঠেন এবং দামি খাবার ও শ্যাম্পেন উপভোগ করতে থাকেন। গ্রাহামের বন্ধু জুয়ানের সন্দেহ হয় এবং তিনি গ্রাহামকে ডিওনের আসল পরিচয় সম্পর্কে সতর্ক করেন।
ধীরে ধীরে গ্রাহামের চোখ খোলে এবং তিনি বুঝতে পারেন যে, ডিওন আসলে একজন প্রতারক। ডিওন তাঁর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন এবং তিনি সহ আরো অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
গ্রাহাম জানতে পারেন, ডিওন তাঁর ও হেদারের যৌথ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়েছেন এবং নিজের নামে ক্রেডিট কার্ড তৈরি করে ফেলেছেন। এই প্রতারণার কারণে গ্রাহামের প্রায় ৩ কোটি টাকার বেশি (বাংলাদেশি মুদ্রায়) ঋণ হয়।
ডিওনের আসল উদ্দেশ্য ছিল গ্রাহামের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা। এই ঘটনার পর গ্রাহামের জীবনে চরম হতাশা নেমে আসে। তিনি মানসিক দিক থেকেও ভেঙে পড়েন।
ডিওনের প্রতারণা তাঁকে এতটাই আঘাত করে যে তিনি আত্মহত্যার কথা পর্যন্ত ভেবেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেন এবং ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।
বর্তমানে গ্রাহাম তাঁর অতীত জীবন থেকে শিক্ষা নিয়েছেন এবং নতুন করে জীবন শুরু করেছেন। তিনি তাঁর ছেলের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন এবং খুব শীঘ্রই তাঁর সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করছেন। গ্রাহাম এখন ডিওনকে ঘৃণা করেন।
তিনি মনে করেন, ডিওন ভালোবাসার যোগ্য নন। এই ঘটনার পর গ্রাহামের জীবনে ভালোবাসার সংজ্ঞা যেন নতুন করে তৈরি হয়েছে। গ্রাহামের এই কঠিন অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘কন মাম’ নামের প্রামাণ্যচিত্রটি।
তথ্য সূত্র: The Guardian