ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং: খাদ্যাভ্যাস নিয়ে সেলিব্রেটি শেফের অভিজ্ঞতা।
ইদানীংকালে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মধ্যে একটি বিশেষ ডায়েট বেশ জনপ্রিয় হয়েছে, আর সেটি হলো ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ বা মাঝে মাঝে উপবাস। এই পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট সময় খাবার গ্রহণ করা হয়, আর বাকি সময় উপবাস পালন করা হয়।
কিন্তু বিশ্ববিখ্যাত শেফ ইয়োটাম ওটোলেনঘির এই উপবাসের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর হয়নি। বরং এই ডায়েট অনুসরণ করতে গিয়ে তিনি বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন।
ওটোলেনঘি মনে করেন, এই ধরনের কঠিন ডায়েট অনুসরণ করার চেয়ে বরং চিরাচরিত খাদ্যাভ্যাসে ফেরা অনেক বেশি জরুরি। তাঁর মতে, খাবারকে শুধু পুষ্টির দিক থেকে বিচার করাটা ভুল। খাদ্যগ্রহণের সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতি, রুচি এবং ভালো লাগা জড়িয়ে থাকে। খাবার সবসময়ই সামাজিকতার একটি অংশ।
গত বছর, ওটোলেনঘি ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের চেষ্টা করেন। প্রথমে, তিনি এই উপবাসের ফলে হালকা অনুভব করেছিলেন।
কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তার শরীরে পরিবর্তন দেখা যায়। ১৬ ঘণ্টা উপবাসের পর তিনি এতটাই ক্ষুধার্ত হয়ে পড়তেন যে, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খাবার গ্রহণ করতে শুরু করেন। ফলস্বরূপ, তার ওজন আরও বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে এই ডায়েট শুরু করলেও, এটি তার শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল।
ওটোলেনঘি মনে করেন, এই ধরনের ডায়েট অনুসরণ করার চেয়ে বরং ট্রেডিশনাল বা চিরাচরিত খাদ্যাভ্যাস অনেক বেশি উপকারী। আমাদের খাদ্য তালিকায় সবসময়ই পরিচিত উপাদানগুলো থাকা উচিত।
এই প্রসঙ্গে তিনি আমেরিকার চিন্তাবিদ মাইকেল পোলানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণার কথা উল্লেখ করেন। পোলান ‘নিউট্রিশনিজ়ম’ নামে একটি ধারণার কথা বলেছিলেন, যেখানে খাবারের পুষ্টিগুণকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ওটোলেনঘি মনে করেন, খাবারকে শুধু পুষ্টির মাপকাঠিতে বিচার করা উচিত নয়। বরং খাবারটি কিভাবে তৈরি হয়েছে, তার স্বাদ কেমন, এবং সেটি গ্রহণের মাধ্যমে আমরা কতটুকু আনন্দ পাচ্ছি, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশেও ভাতের সঙ্গে ডাল, মাছ, সবজি—এগুলো যুগ যুগ ধরে মানুষের প্রধান খাদ্য হিসেবে পরিচিত। খিচুড়ি, বিভিন্ন ধরনের ভর্তা, কিংবা মাছের ঝোল—এগুলো আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ওটোলেনঘির ভাষায় বলতে গেলে, খাবারের এই চিরাচরিত পদ্ধতিগুলো আমাদের শরীরের জন্য সবচেয়ে ভালো।
ওটোলেনঘি আরও বলেন, স্বাস্থ্যকর খাবারের ধারণা স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ভিন্ন হতে পারে।
একজন ব্যক্তি কোথায় বাস করেন, সেখানকার সংস্কৃতি কেমন, এবং তাঁর খাদ্যাভ্যাস কেমন—এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে খাবার নির্বাচন করা উচিত।
সুতরাং, ইয়োটাম ওটোলেনঘি মনে করেন, খাবারের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করার চেয়ে বরং নিজের শরীরের কথা শোনা এবং পছন্দের খাবার উপভোগ করা বেশি জরুরি।
পরিশেষে, তিনি সবাইকে ঘরে তৈরি খাবার খাওয়ার এবং খাবারের আনন্দ উপভোগ করার পরামর্শ দেন।
তথ্য সূত্র: The Guardian