যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পরেও একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন। সর্বশেষ তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা এবং তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করেছেন।
শুক্রবার প্রকাশিত এক স্মারকলিপিতে ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস সহ আরও অনেক ডেমোক্র্যাট নেতার নাম উল্লেখ করেন, যাদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে।
এই তালিকায় রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন, সাবেক কংগ্রেসম্যান লিজ চেনির মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। এছাড়াও, নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিটিয়া জেমস, যিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন, তারও নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে।
সাধারণত সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং সরকারি কর্মকর্তাদের এই ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়, যাতে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারেন।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে জানা যায়, তিনি মনে করেন, এই ব্যক্তিরা এখন আর গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় তথ্য জানার যোগ্য নন। স্মারকলিপিতে ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সরকারি স্থাপনায় প্রবেশাধিকারও বাতিল করার নির্দেশ দেবেন।
এর আগে, দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক, অর্থাৎ ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স, একটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি ট্রাম্পের স্মারকলিপিতে যাদের নাম ছিল, তাদের অনেকের এবং ‘হান্টার বাইডেন বিষয়ক বিভ্রান্তিকর তথ্যের’ সঙ্গে জড়িত ৫১ জনের নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করেন।
উল্লেখ, বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের একটি ল্যাপটপ বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়েছিল, যা ২০২০ সালের নির্বাচনের আগে আলোচনায় আসে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাইডেনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ প্রতিশোধমূলক। কারণ, এর আগে বাইডেনও ট্রাম্পকে গোপনীয় নথিপত্র দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছিলেন, এই যুক্তিতে যে ট্রাম্পের ‘অস্বাভাবিক আচরণ’ এর কারণ।
অন্যদিকে, ট্রাম্প বাইডেনের দুই সন্তান হান্টার ও অ্যাশলি বাইডেনের নিরাপত্তা রক্ষীদেরও সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সম্প্রতি জানা যায়, হান্টার বাইডেন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গেলে তার সঙ্গে ১৮ জন এবং অ্যাশলির সঙ্গে ১৩ জন নিরাপত্তা রক্ষী ছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপগুলো মূলত তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছেন নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিটিয়া জেমস এবং ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ।
এছাড়াও, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্তকারী বিশেষজ্ঞ ফিয়োনা হিল, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলেকজান্ডার ভিন্ডম্যান এবং আইনজীবী নরম্যান আইসেনের মতো ব্যক্তিরাও এই তালিকায় রয়েছেন। যারা ট্রাম্পের অভিশংসন তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
অন্যদিকে, নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির পরাজয়ের পর, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং তার স্ত্রী জিল বাইডেন ডেমোক্রেটিক পার্টিকে পুনর্গঠনে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন। যদিও এই প্রস্তাব এখনো গ্রহণ করা হয়নি।
সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্রেটিক পার্টির জনপ্রিয়তা কমে গেছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান