রমজান মাস শেষ হতে চলেছে, আর এই সময়ে সারা বিশ্বের মুসলিমদের মাঝে যাকাত আদায়ের প্রস্তুতি চোখে পড়ে। ইসলামে যাকাত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, যা দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষের প্রতি সাহায্য ও সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য অপরিহার্য।
এই নিবন্ধে, যাকাত সম্পর্কে কিছু সাধারণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা এর উদ্দেশ্য, হিসাব এবং উপকারিতা বুঝতে সহায়ক হবে।
যাকাত হলো ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। যাকাত শব্দের অর্থ হলো পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। পবিত্র কোরআনে এটি সম্পদকে পরিশুদ্ধ করার, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার এবং অভাবগ্রস্ত মানুষের সাহায্য করার একটি উপায় হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।
যাকাত দেওয়া প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য আবশ্যক, যিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক। নিসাব হলো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ, যা থাকলে যাকাত দেওয়া ফরজ।
এই নিসাব হলো প্রায় ৮৫ গ্রাম সোনার মূল্যের সমান অথবা ৫৯৫ গ্রাম রুপার মূল্যের সমান। বর্তমানে (মে, ২০২৪) যদি সোনার বাজার দর হিসাব করা হয়, তবে এই পরিমাণ সোনার মূল্য প্রায় নয় লক্ষ টাকার কাছাকাছি।
রুপার ক্ষেত্রে এই পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭৫ হাজার টাকার মতো। সম্পদের এই হিসাবের মাধ্যমে যাকাত দেওয়ার বিষয়টি সহজ করা হয়েছে, যাতে সমাজের সকল স্তরের মানুষ এর সাথে যুক্ত হতে পারে।
যাকাত প্রদানের জন্য ব্যক্তির সম্পদ নিসাব পরিমাণ হতে হবে এবং তা এক বছর পর্যন্ত তার কাছে থাকতে হবে (যা ‘হাওল’ নামে পরিচিত)। যদি কোনো ব্যক্তির সম্পদ এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগে কমে যায়, তাহলে তার ওপর যাকাত ফরজ হবে না।
যাকাত প্রধানত দুই প্রকার: যাকাতুল মাল ও যাকাতুল ফিতর। যাকাতুল মাল হলো, সাধারণত, সম্পদের ওপর ধার্যকৃত যাকাত। নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে, বছরে একবার তাঁর মোট সম্পদের আড়াই শতাংশ (২.৫%) যাকাত দিতে হয়।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ব্যক্তির যাকাতযোগ্য সম্পদের পরিমাণ হয় দশ লক্ষ টাকা, তবে তাঁর যাকাতের পরিমাণ হবে ২৫,০০০ টাকা (১০,০০,০০০ টাকার ২.৫%)।
অপরদিকে, যাকাতুল ফিতর হলো ঈদুল ফিতরের আগে দেওয়া একটি আবশ্যকীয় দান। এটি মূলত দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষের ঈদ উদযাপনে সহায়তা করার জন্য দেওয়া হয়। এর পরিমাণ সাধারণত একজন ব্যক্তির এক দিনের খাবারের মূল্যের সমান।
যাকাত দেওয়ার যোগ্য সম্পদ হলো সোনা, রুপা, নগদ টাকা, ব্যবসার পণ্য, শেয়ার বাজার-এ বিনিয়োগ ইত্যাদি। এছাড়াও, যাদের ব্যবসা আছে, তাদের ব্যবসার মালামালের ওপরও যাকাত দিতে হয়।
তবে, দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্র, যেমন— পরিধেয় বস্ত্র, বসবাসের ঘর, গাড়ি ইত্যাদির ওপর যাকাত দিতে হয় না।
যাকাত প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো দরিদ্রদের সাহায্য করা এবং সমাজে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করা। কোরআনে যাকাত পাওয়ার যোগ্য আট শ্রেণীর মানুষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে:
যাকাত সাধারণত নিজের পরিবারের সদস্যদের দেওয়া যায় না, যাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব ব্যক্তির ওপর। এছাড়াও, যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, তাদেরও যাকাত দেওয়া যায় না।
যাকাত আদায়ের জন্য রমজান মাস শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে বিবেচিত হলেও, বছরের যেকোনো সময়েই যাকাত দেওয়া যায়। বাংলাদেশে অনেক ইসলামিক সংস্থা ও ট্রাস্ট রয়েছে, যারা যাকাতের অর্থ সংগ্রহ করে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করে থাকে।
আপনি চাইলে সরাসরি অভাবগ্রস্ত মানুষকে যাকাত দিতে পারেন অথবা কোনো নির্ভরযোগ্য সংস্থার মাধ্যমেও যাকাত প্রদান করতে পারেন।
যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সমাজের ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান কমে আসে। এটি সম্পদকে কিছু মানুষের হাতে জমা হতে না দিয়ে, সকলের মধ্যে বিতরণের ব্যবস্থা করে এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা