যুক্তরাজ্যে পেনশন উত্তরাধিকার সংক্রান্ত নতুন নিয়ম: আপনার জন্য এর অর্থ কী?
যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী অথবা যুক্তরাজ্যে পরিবারের সদস্য রয়েছে এমন অনেকের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, দেশটির সরকার পেনশন উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিদ্যমান কিছু নিয়মে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের ফলে, যারা যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন বা যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ করেন, তাদের উপর এর প্রভাব পড়তে পারে।
বিশেষ করে, যারা যুক্তরাজ্যে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য সঞ্চয় করছেন, তাদের জন্য এই খবরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, জেনে নেওয়া যাক নতুন নিয়মটি আসলে কী এবং এর ফলে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।
বর্তমানে, উত্তরাধিকার কর (Inheritance Tax বা IHT) হিসাব করার সময় পেনশনকে সাধারণত অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার পেনশনের অর্থ উত্তরাধিকার করের আওতামুক্ত থাকে।
কিন্তু, ২০২৩ সালের শেষের দিকে যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে ‘ডিফাইন্ড কন্ট্রিবিউশন’ (Defined Contribution) পেনশন স্কিমের অধীনে থাকা অব্যবহৃত অর্থ উত্তরাধিকার করের আওতায় আনা হবে।
এই ‘ডিফাইন্ড কন্ট্রিবিউশন’ পেনশন স্কিমটি আসলে কী? সাধারণত, এই ধরনের পেনশন স্কিমে কর্মীরা এবং তাদের নিয়োগকর্তা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা করেন।
অবসর গ্রহণের পর, এই সঞ্চিত অর্থ থেকে একজন ব্যক্তি নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। যুক্তরাজ্যের প্রায় সকল ব্যক্তিগত এবং অনেক সরকারি পেনশন স্কিম এই ধরনের ‘ডিফাইন্ড কন্ট্রিবিউশন’–এর অন্তর্ভুক্ত।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তির পেনশন স্কিমের অর্থ মৃত্যুর পরে অব্যবহৃত অবস্থায় থাকে, তাহলে সেই অর্থ উত্তরাধিকার করের আওতায় আসবে।
যদি ওই ব্যক্তির সম্পত্তির পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট সীমার (Tax-free threshold) বেশি হয়, তাহলে এই অতিরিক্ত অর্থের উপর উত্তরাধিকার কর দিতে হবে। বর্তমানে এই সীমাটি হলো ৩ লক্ষ ২৫ হাজার পাউন্ড (প্রায় ৪ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা, যেখানে ১ পাউন্ড = ১৩৭.৩৮ টাকা, তারিখ: ২৫শে অক্টোবর, ২০২৩)।
এই সীমার বেশি মূল্যের সম্পত্তির উপর ৪০ শতাংশ হারে উত্তরাধিকার কর ধার্য করা হবে।
উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক, মিসেস রীতা নামের একজন ব্রিটিশ নাগরিকের ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের পরে মৃত্যু হলো। তার পেনশন স্কিমে ৭ লক্ষ পাউন্ড (৯ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা) এবং অন্যান্য সম্পদ হিসেবে ৮ লক্ষ পাউন্ড (১১ কোটি ২ লক্ষ টাকা) ছিল।
যেহেতু তিনি কোনো জীবনসঙ্গী বা উত্তরাধিকারী রেখে যাননি, তাই তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসাব করা হবে। বর্তমানে, তার পেনশন উত্তরাধিকার করের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায়, তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৮ লক্ষ পাউন্ড।
করমুক্ত সীমা ৩ লক্ষ ২৫ হাজার পাউন্ড বাদ দিলে, তার উপর ১৯০,০০০ পাউন্ড (২ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা) উত্তরাধিকার কর ধার্য করা হতো।
কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যেহেতু তার পেনশন এখন উত্তরাধিকার করের অন্তর্ভুক্ত হবে, তাই তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ হবে ১৫ লক্ষ পাউন্ড (২০ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা)। এক্ষেত্রে উত্তরাধিকার করের পরিমাণ বেড়ে হবে ৪ লক্ষ ৭০ হাজার পাউন্ড (৬ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা)।
অর্থাৎ, নতুন নিয়মের কারণে তার উত্তরাধিকারীদের প্রায় ২ লক্ষ ১৯ হাজার ৩৩৩ পাউন্ড (৩ কোটি ১ লক্ষ টাকা) অতিরিক্ত কর দিতে হবে।
এই পরিবর্তনের ফলে অনেকের মধ্যে তাদের পেনশন নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। অনেকে এখন পেনশন থেকে বেশি অর্থ তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
কেউ কেউ আবার তাদের সন্তানদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে চাইছেন, যাতে তারা বাড়ি কিনতে পারে। এছাড়া, কিছু মানুষ তাদের বাড়ি ছোট করার কথাও ভাবছেন।
তবে, সরকার বলছে যে এই পরিবর্তনের ফলে খুব বেশি মানুষের উপর সরাসরি প্রভাব পড়বে না। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৭-২৮ অর্থবছরে প্রায় ২ লক্ষ ১৩ হাজার এস্টেটের মধ্যে মাত্র ১০,৫০০ টি (প্রায় ৫%) প্রথমবার উত্তরাধিকার করের আওতায় আসবে।
এছাড়া, প্রায় ৩৮,৫০০ এস্টেটকে আগে যা দিতে হতো, তার থেকে বেশি কর দিতে হতে পারে।
যদি আপনার পরিবার যুক্তরাজ্যে থাকে বা আপনি নিজে সেখানে কাজ করেন, তাহলে এই নিয়ম সম্পর্কে অবগত থাকা আপনার জন্য জরুরি।
ভবিষ্যতে উত্তরাধিকার করের বিষয়টি কিভাবে আপনার বা আপনার পরিবারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, সে সম্পর্কে একজন অভিজ্ঞ আর্থিক উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian