মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভূমিতে সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে এক নতুন প্রজাতির ডাইনোসরের জীবাশ্ম, যা বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। ডাইনোসরটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো তার দুই আঙুল বিশিষ্ট বিশাল থাবা, যা অনেকটা বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘এডওয়ার্ড সিজরহ্যান্ডস’-এর প্রধান চরিত্রের হাতের মতো দেখতে।
এই আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা প্রাচীন পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে আরও নতুন তথ্য জানতে পারবেন বলে আশা করছেন।
নতুন আবিষ্কৃত ডাইনোসরের প্রজাতিটির বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে *Duonychus tsogtbaatari*, যা গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো ‘দুটি থাবা’।
এই ডাইনোসরটি থেরিজিনোসaur গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা মূলত তৃণভোজী বা সর্বভুক ছিল। যদিও তারা দেখতে কিছুটা ভয়ঙ্কর ছিল, তবে *T. rex*-এর মতো মাংসাশী ডাইনোসরদের সঙ্গে এদের সরাসরি কোনো সম্পর্ক ছিল না।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ডাইনোসরটি প্রায় ১০ ফুট লম্বা ছিল এবং এর ওজন ছিল প্রায় ২৬০ কিলোগ্রাম। তারা ধারণা করছেন, বাঁকা থাবাগুলো সম্ভবত গাছের পাতা ছিঁড়ে খাওয়ার কাজে ব্যবহৃত হতো।
এছাড়াও, তারা এই থাবা দিয়ে প্রায় ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত ব্যাসের গাছের ডাল ধরে রাখতে পারতো। জীবাশ্ম পরীক্ষার সময় বিজ্ঞানীরা এটির কঙ্কালের কিছু অংশ, যেমন— মেরুদণ্ড, লেজ, কোমর, হাত এবং পায়েরও সন্ধান পেয়েছেন।
কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডার্লা জিলেনিতস্কি এই আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
তিনি জানান, পাওয়া যাওয়া থাবার একটির বাইরের আবরণ (কেরাটিন) অক্ষত ছিল, যা খুবই বিরল ঘটনা।
এই আবরণ নখ তৈরির উপাদান দিয়ে গঠিত। এর থেকে বোঝা যায়, থাবাগুলো হাড়ের চেয়ে অনেক বেশি লম্বা ছিল।
“এটি প্রায় এক ফুটের মতো লম্বা ছিল,” জিলেনিতস্কি বলেন। “ডাইনোসরের ক্ষেত্রে কেরাটিনের এমন বড় থাবা আগে কখনো দেখা যায়নি।”
যুক্তরাজ্যের কুইন মেরী ইউনিভার্সিটির জীবাশ্মবিদ ডেভিড হোন এই আবিষ্কারকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।
তিনি জানান, “গোবি থেকে পাওয়া অন্যান্য নমুনা দেখেছি, তবে এমন সম্পূর্ণ আবরণ আগে দেখিনি।” তিনি আরও যোগ করেন, “যেহেতু কেরাটিন এবং হাড়ের মধ্যে সম্পর্ক এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়, তাই এই আবিষ্কারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
এডিনবারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভ ব্রুসাতে মনে করেন, এই ডাইনোসরগুলি তাদের খাদ্য সংগ্রহের জন্য এই বিশেষ ধরনের থাবা ব্যবহার করত।
তিনি বলেন, “অন্যান্য থেরিজিনোসরেরা তাদের লম্বা থাবা দিয়ে গাছপালা ধরত, যা তাদের ‘এডওয়ার্ড সিজরহ্যান্ডস’ ডাইনোসর হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছে। তবে এই প্রজাতিটির দুটি মাত্র আঙুল ছিল, যা এটিকে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।”
বিজ্ঞানীরা আরও ধারণা করছেন, এই ডাইনোসরের পালকও ছিল। ব্রুসাতে বলেন, “এই আবিষ্কার আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল। জীবাশ্ম আবিষ্কার না হলে আমরা হয়তো এর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতেই পারতাম না।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন